সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এমন সুখবর খুবই সুখকর। এখনও কাজ চলছে। পুরোদমে বাস্তবায়ন হোক এই আশাবাদ রেখে আমার লেখা শুরু করছি।
মানুষ হিসাবে আমাদের যতো সেবা পাওয়া মৌলিক অধিকারের আওতাধীন তার অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। অন্ন, পোশাক আর বসবাসের নিরাপদ জায়গার পরেই শিক্ষা ও চিকিৎসা মানব জীবনে অতীব জরুরি। আমাদের সরকারের এখনও আর্থিক সামর্থ্যে এতোটা সচ্ছলতা আসেনি যে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সারাদেশব্যপী সকল মানুষের একেবারে কাছাকাছি ছড়িয়ে দিবে। তবে আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি সরকার ধারাবাহিকভাবে নিজ অর্থায়নে ও বিদেশি সাহায্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সরকার শিক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়টি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং কাজ চলছে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে এসব খাতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সরকার ধনী শ্রেণির মানবিক মানুষকে এগিয়ে আসতে উৎসাহ জোগানোর পাশাপাশি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে ধনী অনেকেই আছেন; কিন্তু অধিকাংশই ব্যক্তিগত বিলাসিতায় জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন স্বার্থপরের মতো। আবার কেউ কেউ মানবসেবাকে বড়ো ধর্ম মনে করে এগিয়েছেন সরকারের পাশাপাশি। সারাদেশে নানামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের উৎসাহে অনেকেই গড়েছেন। আমরা আশা রাখলাম কর্তৃপক্ষ ওইসব প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত অর্থেই সেবা দিবেন শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে চাপমুক্ত রেখে। এখানে চিকিৎসালয়, সাধারণ শিক্ষালয় ও চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রের সুস্থ পরিবেশ নিয়ে আমার কথা। আমি সারাদেশে ঘুরে দেখিনি, তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলো ও সাধারণ শিক্ষালয় এবং ওই ধরনের বহু প্রতিষ্ঠানের চারপাশের বাহ্যিক পরিবেশ ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে।
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একই সাথে শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র। আমাদের সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ কাঠামো ও সর্বোত্তম সুযোগ সুবিধা নিয়ে ‘সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; আছে কোনো সন্দেহ নাই। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে চালু হয়েছে মেডিকেল কলেজ। মানবসেবার যতো প্রতিষ্ঠান আছে তার অন্যতম হচ্ছে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। আমাদের শহরস্থ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে এই লেখায় আমার বিরূপ মন্তব্য নেই। আমি বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্র খুললেই হয় না। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার জন্য আভ্যন্তরীণ উন্নত সুযোগ সুবিধাদির পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক সবুজ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রয়োজন যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে যেমন সহায়ক, তেমনি দ্রুত রোগীদের সুস্থ হয়ে উঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চিকিৎসাকেন্দ্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মাঝে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। সুস্থ সতেজ পরিবেশ শিক্ষা সহায়ক। পরিবেশ সুস্থ হলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই বলা যায়, অসুস্থ মানুষের জন্যে দ্রুততম সময়ে সুস্থ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে চিকিৎসালয়ের আভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও বাহিরের সতেজ পরিবেশের বিকল্প নেই। ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথ ও চারপাশে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বাহিরের পরিবেশে যতো শৃঙ্খলা ও শান্তি থাকবে শিক্ষা ও চিকিৎসালয়ে অভ্যন্তরে ততো শান্তিময় পরিবেশ পাওয়া যাবে। চিকিৎসালয় ও শিক্ষালয়ে এমন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিকতা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে নিঃসন্দেহে। সুস্থ পরিবেশের সুস্থ মানসিকতা স¤পন্ন একজন শিক্ষক ও চিকিৎসক মানবিক গুণে গুণী হবেন এটা আশা করতেই পারি। কর্তৃপক্ষ আমাদের শহর এবং সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসালয়ের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিষ্কার রাখবেন ও স্বাস্থ্য সচেতন থাকবেন এমন প্রত্যাশা সকল মানুষের। আমাদের জেলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এখনও এমন অবস্থা হয়নি যেখানে হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ড বা কেবিনে শুয়ে বাহিরের সবুজের দেখা মিলে ও সতেজ বাতাস প্রবেশ করে। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে ও হাসপাতালের ভেতরে বাহিরের গাড়ির হর্ন, রিকসার টুংটাং ও বাজারি চিৎকার চেঁচামেচি প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করে এবং হাসপাতালে রোগীর যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে তোলে। সুনামগঞ্জের মানুষ এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে একটু উন্নত চিকিৎসার জন্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। আমি মাঝে মাঝে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনে ও সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটি। ওই প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধান ফটকের সামনে তাকালে মন ভরে যায় এমন পরিবেশ গড়ে উঠেনি। সাধারণত নানান ধরনের গাড়ির নানান ধরনের হর্ন বেজেই চলে সারাক্ষণ। আর মাইকের আওয়াজ সুনামগঞ্জ শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে প্রতিবন্ধক এবং চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে রোগীর জন্যে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তবে এমনটি যাতে না-হয় সেদিকে এখনই মনোযোগ দিতে হবে।
আমাদের সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণ এমন ভাবে সাজানো হোক যেখানে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুস্থ পরিবেশ থাকে। একইভাবে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনে ও ভিতরের প্রাঙ্গণে পুকুর পাড়ে সারি সারি গাছ লাগানো হোক যাতে করে হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিতে আসা মানুষ সবুজ পরিবেশ থেকে সতেজতা পেয়ে অনেকটা সুস্থতা অনুভব করে বাড়িতে ফিরতে পারে। একবার সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠার পরে সেটা সবসময় বজায় রাখতে মানবতার স্বার্থে দেশের স্বার্থে সকল শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা থাকতে হবে। শুধু হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজেই নয়, আমাদের সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, এইচ এম পি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজগোবিন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ষোলঘর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়ে, ফুলের বাগান করে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা হোক। মানুষ পরিবেশ থেকে শিখে।
আমাদের দেশ আয়তনে ছোট। জনসংখ্যার ঘনত্বও বেশি। সবসময় সবখানে আমাদের আরাধ্য পরিবেশ হয়তো আমরা শহরের ভেতর পাবো না। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আগামীদিনে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এমনকি প্রাইভেট ক্লিনিক গড়া হবে তাতে যেনো অন্তত এক টুকরো মাঠ ও সবুজ বাগান থাকে। হাসপাতালে রোগীদের মানসিক প্রশান্তির জন্যে বাগিচা গড়ে তুলতে হবে এবং হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষামূলক ও মানবসেবামূলক সকল প্রাঙ্গণ হোক ফুলেল ও সতেজ। সরকারি সুদৃষ্টি ও ধনীক শ্রেণির মানবিক মানসিকতায় আমাদের সকল ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ও বাহিরের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর হোক। আমাদের মননের বিকাশ ঘটুক।
[লেখক : কলামিস্ট]