স্টাফ রিপোর্টার ::
ফেসবুকে পরিচয়। তারপর প্রেম। প্রেমের এই সম্পর্ক পরিবার মেনে নিলেও বাধা জাতীয়তা ও ভৌগোলিক সীমানা। তাই প্রেমের টানে কাঁটাতারের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন ভারতীয় তরুণী কারিশমা শেখ। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী বিশ্বম্ভরপুরের আশরাফুলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঘর-সংসারের স্বপ্ন দেখছেন।
ভারতের আসাম প্রদেশের শোনিতপুর বালিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাচিম শেখের কন্যা কারিশমা শেখের সাথে তিন বছর আগে পরিচয় হয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চরগাঁও গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের কলেজ পড়–য়া ছেলে আশরাফুলের। গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক জানাজানি হলে মেনে নেয় দুজনের পরিবার। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সীমান্তের কাঁটাতার আর জাতীয়তা। অবশেষে সববাঁধা ভেঙে পরিবারের সহযোগিতায় বৈধপন্থায় গত ১৬ জুলাই বেনাপোল সীমান্ত হয়ে আশরাফুলের বাড়িতে আসেন এই তরুণী। বাংলাদেশে এসে ভালোবাসার মানুষের সাথে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন কারিশমা শেখ। ১৯ জুলাই সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ ঘোষণার হলফনামা করেন এই যুগল। বৈবাহিক সূত্রে এখন বাংলাদেশের নাগরিত্ব চান কারিশমা শেখ।
জানা যায়, ১৯ বছর বয়সী কারিশমা শেখ ভারতের আসাম প্রদেশের ডিকেরায় হায়র সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাবা আব্দুল কাচিম শেখ এলাকার একটি জামে মসজিদে ইমামতি করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে কারিশমা শেখ সবার বড়। বাংলাদেশী তরুণের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার বিষয়টি প্রথম দিকে গোপন থাকলেও মায়ের মাধ্যমে বাবাকে জানান এই তরুণী। প্রথমে বাবা মেনে না নিলেও আশরাফুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় পর সম্পর্ক মেনে নেন তিনি। বাবার সাহায্যে পাসপোর্ট ভিসা করে ১৪ জুলাই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন কারিশমা। গোহাটি হয়ে কলকাতা, কলকাতা থেকে বেনাপোল সীমান্তে আসতে ২ দিন সময়ে লেগেছে তাঁর। একা এতোদূর আসতে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে এই তরুণীর।
ভারতীয় তরুণী কারিশমা শেখ জানান, তিন বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়। তারপর থেকে আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। পরিবার প্রথম দিকে না মানলেও আশরাফুলের পরিবারের আশ^াসে মেনে নেয়। বাবার সহযোগিতায় বৈধপথে তিন মাসের ভিসা নিয়ে আমি বাংলাদেশে এসেছি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমাকে এদেশে আসতে হয়েছে। আশরাফুলের পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছেন। আমরা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার স্বামীর সাথে বাংলাদেশে থাকতে চাই। আমি এদেশের নাগরিকত্ব প্রার্থনা করছি।
এদিকে আশরাফুলের বাবা আলফাজ উদ্দিন উপজেলার চরগাঁও গ্রামের একজন সম্ভ্রান্ত কৃষক। আশরাফুল আলম বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দিগেন্দ্রবর্মণ ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র। ভারতীয় তরুণী কারিশমাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে খুশি আশরাফুল। আজীবন একসঙ্গে থাকতে স্ত্রীর নাগরিকত্ব প্রদানে সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ এই তরুণের।
পরিবার আত্মীয় স্বজনের মায়া ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসায় বিস্মিত আশরাফুলের পরিবার। ভারতীয় এই তরুণীকে নিজের সন্তানের মতো করে গ্রহণ করেছেন আশরাফুলের মা ও বাবা। আশরাফুলের বাবা আলফাজ উদ্দিন বলেন, সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে এক দেশ ছেড়ে আরেক দেশে আসছে মেয়েটি। আমার তিন মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন এই মেয়েটিকেই আমরা আমাদের আরেক মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমরা চাই তারা সুখি হোক। সরকারের কাছে আমার ছেলে বউয়ের জন্য নাগরিত্ব আবেদন করবো।
পরিবারের অন্যান্য সদস্য এলাকার মানুষজনও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। নবদম্পতিকে দেখতে ভিড় করছেন এলাকার মানুষজন।
আশরাফুল ও কারিশমা শেখ তাদের নতুন জীবন সাজাতে করছেন নানা পরিকল্পনা। যদিও তিন মাসের ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন এই তরুণী। পরবর্তিতে ভিসার জটিলতা কাটিয়ে সুখের সংসারবেঁধে আমৃত্যু স্বামীর সাথে থাকার প্রত্যয় এই তরুণীর।