সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কিনছে ১৩ বাণিজ্যিক ব্যাংক। আবার সেই তথ্য গোপন করে চড়া দরে ডলার বিক্রিও করছে। নির্দেশনা অমান্য করে এভাবে ডলার কেনাবেচা করায় ডলার বাজার আবারও অস্থিরতা তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে বড় ধরনের শাস্তির মুখে পড়বে এসব ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডলার বেচাকেনায় কারসাজির সঙ্গে জড়িত ১৩ ব্যাংকের মধ্যে প্রচলিত ধারার ও ইসলামি ধারার ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংকও রয়েছে। এর মধ্যে আগেরবার ডলারের দর কারসাজিতে অভিযুক্ত ব্যাংকের নামও রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডলার বেচাকেনার কারসাজিতে জড়িত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি বিশেষ মিটিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকটি ব্যাংক ডলার বেচাকেনার সময় দামে কম-বেশি করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। ওইসব ব্যাংকের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডলারের সরবরাহ সংকটে কিছু ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত মুদ্রা জমিয়ে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা করছে। সুযোগ থাকলেও তা বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ায়। আবার কয়েকটি ব্যাংক ডলার সংরক্ষণের তথ্যও গোপন করে। এসব দেশি-বিদেশি ব্যাংক বাফেদা নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে কেনাবেচার প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনা অমান্য করায় এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডলারের দর বেশি রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগের পরপরই তা রোধ করতে শক্ত অবস্থানে গিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। গভর্নরের কড়া নির্দেশ পেয়েই কর্মকর্তারা তদন্তে নামছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
গত বছরের মার্চের পর থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়।
এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনকে (বাফেদা)। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ শুরু করেন।
তথ্য মতে, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী রেমিট্যান্স কেনার কথা জানালেও ১১৩-১৫ টাকা পর্যন্ত দরে কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। এভাবে কেনা ডলার আমদানিকারকের কাছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। বাড়তি অংশ কখনো অনানুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি এক্সচেঞ্জ হাউজের প্রতিনিধিকে পরিশোধ করা হচ্ছে। কখনো ‘অন্যান্য খাতের ব্যয়’ দেখানো হচ্ছে। একইভাবে আমদানিকারকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে তা ‘অন্যান্য খাতের আয়’ হিসেবে সমন্বয় করা হচ্ছে।
এদিকে ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার না কিনতে ব্যাংকগুলোকে গত ৫ জুলাই আবারও অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা। কিন্তু এতেও ভ্রুক্ষেপ না করে অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রি করেই চলছে এসব ব্যাংক।
বর্তমানে রেমিট্যান্সে ব্যাংকগুলো সরকারের দেওয়া ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা ছাড়াও প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের কাছ থেকে ডলার নিতে পারবে। এ ছাড়া, রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ডলার কেনার সময় ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দিতে পারবে।