1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শান্তিগঞ্জে কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষ : মুখলেছুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩

হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাজ গ্রামে কাঁঠাল নিলাম নিয়ে সংঘর্ষে চারজন নিহত হলেও মুখলেছুর রহমান (৬০) নামে একজনের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি হাসনাবাজ গ্রামের মৃত আজির মোহাম্মদের পুত্র। গত সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাজ গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হন। তারা হলেন- হাসনাবাজ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) ও আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)। তবে মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি ধূম্রজালে পরিণত হয়েছে। তবে মৃত মুখলেছুর রহমানের স্ত্রী জামিলা বেগম তার স্বামী মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর বর্ণনা দিয়েছেন। যার সকল প্রকার তথ্যাদির ভিডিও ও অডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সরেজমিনে শনিবার (১৫ জুলাই) স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মুখলেছুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে ব্লাড প্রেসার, শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হওয়ায় ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারছিলেন না। গত সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাজ গ্রামে কাঁঠাল নিলাম ও পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে মালদার মিয়া গোষ্ঠী ও দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে মুখলেছুর রহমান তার বসতঘরেই ছিলেন। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে হাসনাবাদ গ্রামের দ্বীন ইসলাম গোষ্ঠীর মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) মারা যান। একই দিন দুপুরে মালদার মিয়া গোষ্ঠীর আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)কে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ছাতক থানাধীন কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষ পরবর্তী থানা পুলিশের গ্রেফতার অভিযান শুরু করায় মুখলেছুর রহমান নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তার স্ত্রী জামিলা খাতুন ও জামলবাজ গ্রামের বেয়াই নুরুল আমিনকে সাথে নিয়ে ওইদিন দুপুর ১টায় হাসনাবাজ গ্রাম থেকে জামলাবাজ গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। প্রথমে হাসনাবাজ গ্রাম থেকে খেয়া পার হয়ে বগুলাকাড়া প্রথামিক বিদ্যালয়ের সামনে আসেন। পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা করে গুলারকাড়া থেকে জামলাবাদ গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। পথিমধ্যে টমটম দিরাই মদনপুর আঞ্চলিক সড়কে চলাচলের সময় বড় বাসকে সাইট দিতে গিয়ে অসর্তকতার কারণে মুখলেছুর রহমান অটোরিকসা থেকে পাকা রাস্তার পাশে পড়ে যান। এতে তার মাথায় ও পিঠে সাধারণ জখম হয়। তখন মুখলেছুর রহমানের স্ত্রী জমিলা বেগম ও বেয়াই নুরুল আমিন আহত অবস্থায় তাকে নোয়াখালী বাজারে পল্লী চিকিৎসক নেছার আহমদের ফার্মেসিতে নিয়ে যান এবং তার দুর্বলতা কাটানোর জন্য একটি স্যালাইন পুশ করা হয়। পরে পল্লী চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মুখলেছুর রহমানকে সুনামগঞ্জে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন। ওইদিন বিকেলে মুখলেছুর রহমানকে তার পরিবারের লোকজন সুনামগঞ্জ শহরের প্রাইভেট ডাক্তার দেখান এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা স¤পন্ন করা হয়। তখনও মুখলেছুর রহমানের শরীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। পরে পরিবারের লোকজন তাকে সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সন্ধ্যার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে একটি মহল প্রতিপক্ষ লোকজনদেরকে ফাঁসাতে মুখলেছুর রহমানের স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
নোয়াখালী বাজারের পল্লী চিকিৎসক নেছার আহমদ বলেন, গতে সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় মুখলেছুর রহমানকে তার পরিবারের লোকজন আমার কাছে নিয়া আসেন। আমি তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তাকে দ্রুত সুনামগঞ্জে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বলি। তখন কেউ আমাকে মুখলেছুর রহমান সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে কি না – সে বিষয়ে কোন কিছু বলে নাই। পরে জানিতে পারি, ওইদিন দুপুরে হাসনাবাজ গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে।
মুখলেছুর রহমানের স্ত্রী জমিলা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। প্রেসার, পায়ে ধরা, বুকে ধরা আছিল। আগে ডাক্তারে খইছে আমার স্বামীর শরীরের একবাজু নাই। তাইন যেকোন সময় স্ট্রোক করি মারা যাইতা পারইন। ঘটনার দিন বাড়িতে আছলা। পুলিশ ডরাইয়া জামলাবাজ বেয়াইর বাড়িতে যাইতা আছলা। টমটম গাড়ি থাকি পইড়া মাথায় চোট পাইছইন। পরে নোয়াখালী বাজারে
ডাক্তার দেখাই, নেছার ডাক্তারের ঘরে স্যালাইন দেই। পরে সুনামগঞ্জে নিয়া দেখাই। ডাক্তারে কইছে তুমার স্বামীর একবাজু নাই। যেকোন সময় মারা যাইতে পারইন। পরে বাড়িত লইয়া আইছি। মাগরিবের পর আমার ঘরও মারা গেছইন তাইন।
মুখলেছুর রহমানের সুতরহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জ থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক তপন কান্তি দাস জানান, গত ১১ জুলাই সকালে মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাড়িতে যাই এবং তাহার মৃতদেহ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে সুরতাহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষ বুঝা যাবে- কিভাবে মুখলেছুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।
সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধর বলেন, মুখলেছুর রহমানের মৃত্যুর পর তার মৃত্যুর বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করেছি। তার পরিবারের লোকজনও বলেছেন অটোগাড়ি থেকে পড়ে আহত হয়েছিলেন। যেটাকে ন্যাচারাল ডেথ বলা হয়। পরিবারের লোকজনও লিখিতভাবে বলেছে তিনি মারামারিতে আহত হন নাই। স্বাভাবিকভাবেই মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৭ জুলাই) জুমার নামাজের পর মসজিদে দান করা একটি কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র করে হাসনাবাজ গ্রামের দ্বীন ইসলাম ও মালদার আলীর লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দুজন ও হাসপাতালে একজনসহ তিনজন নিহত হন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com