“সামাজিক সংগঠন ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর-এর আয়োজনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাস্টিয়ান সুনামগঞ্জ-এর সহযোগিতায় সুনামগঞ্জ সদরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়। চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলায় দশ হাজার চারা লাগানোর লক্ষ্যে ফেয়ার ফেইস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সপ্তম দিনে সুনামগঞ্জ পৌর ভূমি অফিসে চারা লাগানোর মধ্য দিয়ে সদরে কার্যক্রম শুরু করা হয়।” এইটুকু উদ্ধৃতিই যথেষ্ট।
কার্যক্রমটি হয়েছে গত ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে। এর একটি তাৎপর্য আছে। আর সেটি হলো কেবল পৃথিবীতে নয়, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের একটি জেলা সুনামগঞ্জেও গাছপালা কমে গিয়ে বৃক্ষরোপণের দরকার দেখা দিয়েছে। দরকারটা এই যে, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগছে পৃথিবী। ইতোমধ্যে ব্যাপকাকারে বায়ুম-লের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে ক্রমাগত গাণিতিক হারে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, বরফগলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঘটনাদি কেবলই বাড়ছে এবং এমনকি সম্প্রতি খবর পাওয়া গেছে সমুদ্রের রঙ নীল থেকে সবুজ হয়ে উঠছে, যা মানবপ্রজাতিসহ পৃথিবীর প্রাণপ্রকৃতির জন্যে মারাত্মক ক্ষতির বার্তাবহ। আসলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে। পৃথিবীতে মুক্তবাজার অর্থনীতির মুনাফালোভী ও যুদ্ধবাজ নীতি পরিহার করে অর্থনীতিকে প্রকৃতিবান্ধব ও বিশেষ করে মানবিক করে তোলতে না পারার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। দেশে দেশে মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বনজঙ্গল উজাড়ন চলেছে বিগত শতাব্দীর পুরোটা কালপর্বে। সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে-সব বনজঙ্গল ছিল তার প্রত্যেকটিকে মানুষ ধ্বংস করে দিয়েছে সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্যে। নদী-নালা-খাল-বিল হাওরের প্রাণপ্রকৃতি বলতে গেলে ধ্বংসের শেষ সীমায় এসে ঠেকেছে। টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় মরে গিয়েছে, মাছের প্রাকৃতিক মাতৃসদন এখন মাছ ও জলজ উদ্ভিদ শূন্য। বনজঙ্গলের দেশ, গাছগাছড়ার দেশ সবুজশ্যামল সুনামগঞ্জে এখন বৃক্ষ রোপণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সামাজিক সংগঠন। কাকস্য পরিবেদনা।
বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে আমরা সামাজিক সংগঠন ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর ও সাস্টিয়ান সুনামগঞ্জকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি ও অভিবাদন জানাই। তাঁদের পৃথিবীর প্রাণপ্রকৃতি রক্ষাকারী এই বৃক্ষরোপণের কার্যক্রম সারাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণের উদ্দীপনা জাগ্রত করুক, এই কামনা করি। সেইসঙ্গে কামনা করি, সুনামগঞ্জ শহরে ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে শুরু হওয়া খাল উদ্ধারের কার্যক্রমের সফলতা। এ কার্যক্রমের সফলতা সুনামগঞ্জ শহরের প্রাণপ্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তোলবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার স্বার্থে সকল মানুষকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কর্তব্য পালনার্থে বৃক্ষরোপণ ও খাল উদ্ধারের আন্দোলনে শরিক থাকতে হবে।