গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই ২০২৩) একটি স্থানীয় দৈনিকের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘ডলুড়া সীমান্তে চোরাচালান, এক রাতেই ২৫ লাখ!’ নিচে সংবাদবিররণীতে লেখা হয়েছে, “জেলার ডলুরায় হচ্ছে না ইমিগ্রেসনসহ শুল্ক স্টেশন। অথচ এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ পথে নামছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মঙ্গলবার রাতেও এই সীমান্ত পথে লাখ লাখ টাকার চিনি, কসমেটিক্স, শাড়ি-লুঙ্গি ও পাথর অবৈধ পথে নেমেছে। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পূর্ব-পশ্চিম ডলুরার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা ও চলতি নদীকে এরা চোরাচালানের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই সীমান্তের ওপারের ভারতীয় অংশের শনিবারি বাজার ঘাট, কাকইগড়া গ্রামের নদীর ঘাট ও লালপানি ঘাটকে দুই দেশের চোরাচালান চক্র ব্যবহার করছে। পশ্চিম ডলুরার একাধিক বাসিন্দা প্রতিবেদককে জানান, সীমান্তের ওপার থেকে এই পথ দিয়ে এবং হাসাউড়া হয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চিনি, কসমেটিক্স, পাথর, শাড়ি-লুঙ্গি এপারে আসছে। কোন কোন সময় মাদকও আসে এই পথ দিয়ে। মঙ্গলবার রাতে ওই সীমান্তের এক ব্যক্তি ফোনে জানান, মালেক, হিরণ ও সিরাজসহ ১০-১২ জন ওখানে লাইনম্যান হিসেবে টাকা আদায় করে থাকে। তাদেরকে টাকা দিয়ে রাত ১২টার পর পূর্ব-পশ্চিম ডলুরা, কাইয়ারগাঁও, ভাদেরটেকসহ সীমান্ত এলাকার কয়েকশ’ নির্দিষ্ট মানুষ সীমান্তের ওপারের শনিবারি বাজার, কাকইগড়া, লালপানি ও জিমারডর এলাকায় ছোট ছোট বারকি নৌকা নিয়ে পৌঁছায়। কেউ কেউ বড় বড় গাড়ির টায়ার ও টিউব নিয়ে ওখানে যায়। মালামাল বোঝাই করে রাত তিনটার পর এপারে (ভাটির দিকে) নৌকা ও টায়ার টিউবসহ প্রায় দুই কিলোমিটার ভাসিয়ে নিয়ে আসে। এপারে আসার সময় স্থানীয়ভাবে ভান্ডারীর বাড়ির ঘাটে ‘কথিত লাইনম্যান’ থাকে। তারাই প্রতি বারকি থেকে ৫০০ টাকা এবং টায়ার টিউব থেকে ২০০ টাকা করে নিয়ে এপারে ঢুকার পাস দেয়। এখানে বিজিবির পরিচয়ে সাদা পোশাকের কয়েকজনও থাকেন। যারা এই টাকা বুঝে নেন।”
কারও কারও ধারণা এরপর কীছু বলে-কয়ে কোনও লাভ নেই। কীছু না বলে বরং চুপ থাকা বাঞ্ছনীয়। অধিক কীছু বলতে গেলে উপরি পাওনা হিসেবে নিজের ঘাড়ে আপদস্বরূপ ঝামেলার বিপদ ঘাড়ে চড়ে বসার আশঙ্কা আছে। লোকে বলে বেড়ায় ফসল খেলে কৃষকের কীছু করার থাকে না। অথচ সীমান্তে এমন লঙ্কাকা- ঘটতে থাকলে তো একটা দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ চলতে পারে না। যেমন এই তো মাত্র দিন দুয়েক আগে আমাদের পুলিশ সুপার বলছেন, ৩ মাসের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলাকে মাদকমুক্ত করবেন , কিন্তু সীমান্তে এবংবিধ রমরমা অবস্থায় চেরাচালান চলতে থাকলে তাঁর মাদকমুক্ত অভিযান কী করে সফলতা লাভ করবে, বুঝে উঠতে পারি না। ‘লাখ লাখ টাকার চিনি, কসমেটিক্স, পাথর, শাড়ি-লুঙ্গি’র সঙ্গে তো মাদকদ্রব্যও আসছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থাৎ সার্বিক পরিস্থিতি বলছে চেরাচালান যে-করেই হোক বন্ধ করতে হবে। বিদগ্ধ মহলের ধারণা, চোরাচালানের সঙ্গে সীমান্তের সাধারণ মানুষ যতোদিন যুক্ত থাকবে ততোদিন চোরাচালান বন্ধ করা যাবে না। সেজন্য সীমান্ত এলাকায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজের সংস্থান করতে হবে, যাতে চোরাচালান করে জীবন নির্বাহের পথে ধরতে না হয় সাধারণ মানুষকে। সীমান্ত এলাকায় লোকজনের চোরাচালানে লিপ্ত হয়ে আয়-রোজগারের উপায়টির বিপরীতে অন্য একটি একটি উপায় গড়ে তোলতে হবে। সোজাকথায় সীমান্তের মানুষেকে বেঁচে থাকার জন্য কাজ দিতে হবে। তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি না করে চোরাচালান বন্ধের যতেই চেষ্টা করা হোক না কেন, চোরাচালান বন্ধ হবে না কোনও দিন। বরং সে-চোরাচালানের সঙ্গে প্রশাসনের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা কামাইয়ের মওকা ছাড়তে চাইবেন না। এটাই স্বাভাবিক।