একটি সংবাদের কীছু অংশ তোলে ধরছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা বলছেন, ‘সাড়ে তিন একর জমি ছিল কিন্তু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শেষ আশ্রয় ভিটেবাড়িও নদীতে চলে যাচ্ছে। অন্য কোথাও জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘরেই আছি।’ তারপর লেখা হয়েছে, অশ্রুসিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন দোয়ারাবাজার উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী (৭৩)। তাঁর মতো আরও অনেকে সুরমা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী আরও বলেন, সুরমা নদীর বুকে অর্ধেক ঝুলে থাকা ঘরে ১৫ সদস্য নিয়ে বসবাস করছি।’
আপাতত উদ্ধৃতি এখানেই শেষ এবং শেষ হওয়ার আগে বুঝা হয়ে গেছে যে, একজন মুক্তিযোদ্ধা নদীর সর্বগ্রাসিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, যিনি একদা যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের কোনও সহযোগিতা কিংবা সাহায্য তাঁর দুয়ারে গিয়ে এখনও পৌঁছেনি। এই কর্তব্যে অবহেলার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ইতিহাস হয়ে আছে মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির জীবনের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কাঁকন বিবিকে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষা করে জীবননির্বাহ করতে হয়েছিল, সাংবাদিকরা তাঁকে ভিক্ষুক ‘মুক্তিবেটি’ হিসেবে আবিষ্কার করার আগে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপ্রশাসন প্রকৃতপ্রস্তাবে এতোটাই অবহেলার শিকারে পরিণত করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এবং বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে রাজকাররা রাজনীতির মাঠ দখল করে নিয়েছিল। এমন ঘটনাও আছে, বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশতাব্দী পর রাষ্ট্রপ্রশাসনের হাত থেকে দেনদরবার করে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র লাভ করতে হয়েছে। অথবা এখনও কোনও কোনও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীরা পূর্বসূরির মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র সংগ্রহের জন্যে সংগ্রাম করে চলেছেন। অপরদিকে এমনকি রাজাকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করে খাওয়ার উদাহরণ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে এই দোয়ারাবাজারেই, পত্রিকায় সে-সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এমন বিতিকিচ্ছিরি সব কা-কারখানা তো হওয়ার কথা ছিল না।
সে যা-ই হোক আমরা এখনকার মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, উস্তার অলীর জীবনের শেষ ক’টি দিন যাতে একটু ভালোভাবে শান্তিতে কাটিয়ে যেতে পারেন সে-ব্যবস্থা করা হোক। তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান।