দোয়ারাবাজার উপজেলার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিদ্যার শিক্ষক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে গত সোমবার (৫ জুন ২০২৩) ক্লাস বর্জন করে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে।
পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষক যে-ঘরে প্রাইভেট পড়াতেন সে ঘর থেকে ভুক্তভোগী ছাত্রী ব্যতীত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন এবং নিরিবিলিতে উক্ত ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রয়াস চালান। চূড়ান্ত কীছু ঘটার আগেই অপ্রত্যাশিত নির্যাতনের শিকার ছাত্রীটি কৌশলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং বিষয়টি তার সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যদের অবগত করে এবং তাঁরা প্রতিকার প্রার্থনা করে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনও প্রকার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিশ্চেষ্ট থাকেন, তাঁর এই ব্যর্থতার পরিণতিতে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ঘটনা জানতে পেরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ মুর্শেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমদ ও দোয়ারাবাজার থানার উপপুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বিক্ষোভ বন্ধ করে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান। পরে এ আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।’
কেউ কেউ বলেন, কী যে হয়েছে আজকাল সমাজটার। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে ধর্ষণ, নারীর প্রতি যৌননিপীড়ন ও বিভিন্ন প্রকার নারীনির্যাতনের সংবাদÑ যা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। এমনকি তুচ্ছ কারণে নারীকে খুন পর্যন্ত করার সংবাদ প্রতিপন্ন করছে যে, সমাজটা নারীর প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি করে সহিংস, হিং¯্র, সন্ত্রাসী ও নিপীড়নমূলক হয়ে পড়েছে এবং পুরুষতান্ত্রিকতা নিজেকে ধর্ষণপ্রবণ প্রতিপন্ন করার জন্যে একরকম উঠে পড়ে লেগেছে। সত্যি অবাক না হয়ে উপায় নেই। যখন দেখি, একদিকে ধর্ষকের হুমকির মুখে বিচারপ্রার্থী ধর্ষিতাসহ তার স্বজনরা বসতভিটা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে পালিয়ে বেড়ায় এবং অন্যদিকে অভিযুক্ত ধর্ষক আইনের নাকের ডগায় দিব্যি ঘুরে বেড়ায়, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আইনের প্রতিনিধির সঙ্গে বসে এক টেবিলে পানাহার করে আড্ডায় মত্ত থাকে, অপরদিকে সমাজের মাতব্বর ও জনপ্রতিনিধিরা ধর্ষিতার পক্ষাবলম্বন না করে ধর্ষকের পক্ষ হয়ে আপোসরফার অপতৎপরতায় নিজেদের ব্যস্ত রাখেন জাগতিক স্বার্থোদ্ধার কিংবা উৎকোচের প্রত্যাশায়।
এমতাবস্থায় বিদগ্ধজনেরা মনে করেন যে, বর্তমান সমাজ পুরুষতান্ত্রিকতার কাছে আত্মসমর্পিত অর্থে একধরনের কাপুরুষ সংস্কৃতির অনুবর্তী এবং সার্বিক বিবেচনায় অসুস্থ একটি সমাজ। এই অসুস্থ সমাজের সুস্থতা চাই। আমরা আশা করছি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা, অভিভাবক, নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সকলে মিলে ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক আচরণে জড়িত শিক্ষকের প্রতি কোনওরূপ অনুকম্পা প্রদর্শন না করে অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন এবং সমাজ উন্নয়নে সহায়ক এই অবশ্য কর্তব্য পালন করে তাঁরা যে পুরুষতান্ত্রিকতার কাপুরুষতাগ্রস্ত সংস্কৃতির ধারক কিংবা বাহক নন তা প্রতিপন্ন করবেন। সমাজের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা এই পুরুষতান্ত্রিকতার কাপুরুষতা থেকে বেরিয়ে আসুন, সকলের প্রতি পরিশেষে এই আহ্বান রইলো।