স্টাফ রিপোর্টার ::
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নারীনেত্রী দিপালী চক্রবর্তী’র ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৩ সালের ৩১ মে ৭০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা দিপালী চক্রবর্তী ছিলেন প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাসী।
দিপালী চক্রবর্তী ১৯৩৩ সনের ৫ জানুয়ারি জগন্নাথপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সত্যেন্দ্র চৌধুরী এবং মাতা হীরালতা চৌধুরী। গ্রামেই তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। সংগীতের তালিমও নেন পরিবার থেকে। তাঁর স্বামী মনোরঞ্জন চক্রবর্তী ছিলেন সজ্জন ব্যক্তি। তাঁরও ছিল সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ। মনোরঞ্জন চক্রবর্তী মিঠে সুরে বাঁশি বাজাতেন আর দিপালী চক্রবর্তী এ¯্রাজে ঝংকার তুলতেন।
সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ¯œাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন দিপালী চক্রবর্তী। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সাংগঠনিক কর্মকা-ের গুণে এই সংগঠনের মধ্যমণি হয়ে উঠেন। পড়াশোনা, সংসার কর্ম, সংগঠন, আন্দোলন সবই এক সঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময়ে সুনামগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হতো দিপালী চক্রবর্তী ও তাঁর বাসাকে কেন্দ্র করে। বিকেল হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে সমবেত হতেন তাঁর উকিলপাড়ার বাসায়। এখানে বসেই সবাই ঠিক করতেন পরবর্তী পরিকল্পনা এবং আন্দোলনের ছক। ডিগ্রি পাস করে কলেজ জীবন শেষ হলেও দিপালী চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে রাজনীতির চলমান প্রবাহ শেষ হয়নি। নারীর উপর অত্যাচার প্রতিরোধে তিনি ছিলেন সর্বদা প্রতিবাদ মুখর। সেই সময়ে সুনামগঞ্জের একমাত্র মহিলা সংগঠন মহিলা সমিতিতে যোগদান করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন দিপালী চক্রবর্তী। এদিকে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশঃ স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ লোকজন শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নেন মেঘালয়ের বালাটে। দিপালী চক্রবর্তীও পরিবার-পরিজনসহ বালাটে যান। বালাটে এবং শিলংয়ে তিনি রেডক্রসের পক্ষ থেকে শরণার্থীদের সেবাদানে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হবার পরও দীর্ঘদিন তিনি দেশে ফিরে আসা শরণার্থীদের মাঝে রেডক্রসের পক্ষে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে নারী অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন তিনি। উপলব্ধি করেন নারী জাগরণ না হলে অপূর্ণ থেকে যাবে অর্ধেক জনগোষ্ঠী। ১৯৯৯ সালের ১ মে সুনামগঞ্জে দিপালী চক্রবর্তীর হাত ধরে জন্ম নেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুনামগঞ্জ শাখা। দিপালী চক্রবর্তী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। সুনামগঞ্জের সারদা সংঘেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন দিপালী চক্রবর্তী। পরবর্তীতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তাঁর বড় মেয়ে রতœা চক্রবর্তী উঁচুমানের সঙ্গীত শিল্পী। বড় ছেলে প্রয়াত অ্যাড. মৃণাল চক্রবর্তী মিঠু একজন ভালো তবলাবাদক ছিলেন। দিপালী চক্রবর্তী’র দ্বিতীয় ছেলে প্রয়াত ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী ছিলেন দেশবরেণ্য লোকসংগীত গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের অধ্যাপক। ছোট ছেলে মলয় চক্রবর্তী রাজু পেশায় একজন আইনজীবী। তিনিও একজন সংগীত শিল্পী।