জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া ::
বজ্রপাতে মৃত্যু যেন হাওরবাসীর ‘নিয়তি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকার পাইলট প্রকল্পের আওতায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৮টি লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার (বজ্রনিরোধ দন্ড) স্থাপন করলেও এগুলো পর্যাপ্ত নয়। হাওরবাসী আরও বজ্রনিরোধক দ- দ্রুত স্থাপনের দাবি তুলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, শাল্লা উপজেলার হাওর এলাকায় ১৮টি লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার স্থাপন করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন তৌহিদা রশীদ জানান, এগুলো খুবই আধুনিক ও উন্নতমানের অ্যারেস্টার। সেগুলো প্রায় ১০০ মিটার এরিয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে। ওই এলাকার মধ্যে যত বজ্রপাত হবে সেগুলো গ্রাউন্ডে আসবে না। অ্যারেস্টারগুলো লাগানো হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার সমন্বয়ে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত শুরু হলে হাওরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। বজ্রপাতে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু সেই আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। তাই হাওরে আরও বজ্রনিরোধক দ- স্থাপনের দাবি উঠেছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজি মাসুদুর রহমান জানান, বজ্রপাত থেকে রক্ষায় শনির ও হালি হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তরে ৪০ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি দ- স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ টাকা। প্রতিটি টাওয়ার ১০৭মিটার রেডিয়াসে থাকা লোকজন পশুপাখি গাছপালা গবাদিপশুকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করবে। তুরস্কের তৈরি প্রতিটি ডিভাইসে রয়েছে কপারচিপ, ডিজিটাল কাউন্টার ডিভাইস, কপার রড, জাঙ্কশন বক্সসহ রয়েছে নানা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস। প্রতিটি টাওয়ার মাত্র ৬০ মাইক্রোসেন্ড সময়ের মধ্যে আকাশে হওয়া বজ্রপাতকে মাটিতে টেনে নিয়ে আসবে। এই এলাকায় আর বজ্রনিরোধক দ- স্থাপন করা প্রয়োজন।
বজ্রপাতে মৃত্যু থেকে বাঁচতে আরও বেশি পরিমাণে বজ্রনিরোধক দ- স্থাপনের দাবি জানিয়ে শনির হাওরের কৃষক সাদেক আলী বলেন, বজ্র নিরোধক দ- স্থাপন হলে হাওরে কর্মরত কৃষক, জেলেরা বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাই বজ্র নিরোধক দ- স্থাপনের পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত।
টাঙ্গুয়ার হাওরের কৃষাণী হালিমা বেগম জানান, হাওরে বজ্রপাতের কারণে আমরা আতঙ্কে থাকি। কখন কার প্রাণ যায় তার ঠিক নাই। বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করলে আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ বলেন, হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্র নিরোধক দ- স্থাপনের পাশাপাশি সবাই সতর্ক থাকলে বজ্রপাতে মৃত্যু অনেকটা কমে আসবে। আমরা হাওরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সংখ্যক বজ্র নিরোধক দ- স্থাপনের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, আগামীতে আরও বেশি বজ্রনিরোধক দ- স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।