যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে মহান মে দিবস পালিত হল। সুনামগঞ্জও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ এই ঘোষণা ব্যক্ত করে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। অপরদিকে এখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি পালন করে। একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে’ এই দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এই দ্বিবিধ (মালিক-শ্রমিক ঐক্য ও ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম শ্রমিকমজুরি) রাজনীতিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে একটি বিষয় কেবল উল্লেখ করে আজকের সম্পাদকীয় শেষ করবো।
সরকারি পক্ষ থেকে ‘মালিক-শ্রমিকের ঐক্য’ প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেখানে মুনাফাভিত্তিক মুক্তবাজার আর্থব্যবস্থার পরিসরে মালিকরা শ্রমিককে নির্মমভাবে শোষণ না করে মালিক হিসেবে নিজেরা টিকে থাকতে পারে না। অপরদিকে অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচার মতো একটি মজুরি দেওয়ার যুক্তিসঙ্গত দাবি উঠেছে, বলা হচ্ছে, শ্রমিকদেরকে ২০ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে। কিন্তু পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থার পরিসরে এমন দাবি কোনও মালিক কিংবা পুঁজিপতি মেনে নেবেন না, বরং এই দাবির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন একাট্টা হয়ে। আর ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্র পরিচালক এখনও তাঁরাই। সুতরাং মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব কীছুতেই নিরসন হবে না, ঐক্য তো গুড়েবালি ও অবাস্তবতার সমুদ্রে সন্তরণ। বরং যে-টা হবে সে-টা হলো, মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব ক্রমে তীব্র হবে ও শ্রমিক নেতৃত্বের পুঁজিবাদী দালালি-দাসত্বকে অসম্ভব করে তুলবে, প্রকারান্তরে পুরনো আর্থব্যবস্থাটিকে গুঁড়িয়ে দেব। শ্রমিক-মালিক ঐক্যের রাজনীতিক বুলিটি শ্রমিকমুক্তির আন্দোলনের তীব্রতার প্রমাণকেই আপাতত প্রতিপন্ন করে। এবং সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, আপাতত পুঁজির শৃঙ্খলে বন্দি সমাজ মুক্তির সংগ্রামকে আরও তীব্র করে তুলবে, মানবতার মুক্তির প্রশ্নে এর কোনও বিকল্প নেই।