মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর সন্তান আমাদের বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির গর্ব। বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন দু’হাত উজাড় করে। মানব জীবনের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে ভেবেছেন এবং লিখেছেন। পেয়েছেন যশ খ্যাতি। খ্যাতির আড়ালে পেয়েছেন অনেক দুঃখ যন্ত্রণা।
প্রিন্স দ্বারকানাথের নাতি, মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথের পুত্রের জীবনে যে দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে, এটা ভাবা যায় না ঠিক। মৃত্যুতে দুঃখ পেয়েছেন বিস্তর। দুঃখ পেয়েছেন প্রেমে। কষ্ট সয়েছেন টাকার টানাটানিতে। বেদনা পেয়েছেন বন্ধু আপনজনদের থেকে। কবির জীবন ভরা ছিল নানা বেদনায় আর আপনজনদের অসময়ে চলে যাওয়ায়।
রবীন্দ্রনাথ তার জীবনে অনেক দুঃখ সয়েছেন পরিবারের আপনজনের মৃত্যু দেখে। তিনি ৮০ বছর আয়ুষ্কাল পেলেও তার ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে বেশিরভাগই অল্প বয়সে মারা যান। মাত্র ৪১ বছর বয়সে তিনি তার স্ত্রীকে হারান। সন্তানদের মধ্যেও বেশিরভাগই অল্প বয়সে মারা যান। কবিতায় তিনি দূরে সরাতে চেয়েছেন মৃত্যুকে বারবার। কবির ভাষায়–
“তবে মৃত্যু দূরে যাও
এখনি দিয়ো না ভেঙে এ খেলার পুরি
ক্ষণেক বিলম্ব করো
আমার দুদিন হতে করিয়ো না চুরি।”
এ দুঃখ কষ্টকে মেনে নিয়েই তিনি সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছেন। তার সমসাময়িক লেখকদের কাছ থেকেও তিনি অনেক লাঞ্ছনা পেয়েছেন। তিনি তার বন্ধু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কাছ থেকে যে আঘাত পেয়েছেন তা-ও নীরবে সয়ে গেছেন। সেসময়কার কলকাতার বুদ্ধিজীবীরাও তার প্রতি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আক্রমণ করেছেন। রাজনীতিতেও রবীন্দ্রনাথ একবার দুবার নয়, বহুবার নিহত হয়েছেন। তাকে তিন ধরনের রাজনীতি সামলাতে হয়েছে। মুসলিম জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি।
১৯১৩ সালের ১৪ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের ঘোষণার পরে কলকাতার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রবীন্দ্র অনুরাগী শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, ২৩ নভেম্বর ১৯১৩ তারিখে তারা রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনা দেবেন। ২৩ নভেম্বর ১৯১৩ সালে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কবির বন্ধু স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে সভাপতি করা হয়। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই কবি নিবেদিত অভিনন্দনের জবাবে ভাষণে তার অন্তরে দীর্ঘদিনের লালিত পুঞ্জিভূত ব্যথা প্রকাশ করেন। তার সেদিনের সেই ভাষণের কিছু অংশ এরকম- “আজ সমস্ত দেশের নামে আপনারা যে সম্মান দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তা অসঙ্কোচে স¤পূর্ণভাবে গ্রহণ করি এমন সাধ্য আমার নেই। কবি-বিশেষের কাব্যে কেউ বা আনন্দ পান, কেউ বা উদাসীন থাকেন, কারো বা তাতে আঘাত লাগে এবং তারা আঘাত দেন। আমার কাব্য সম্বন্ধেও এই স্বভাবের নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি, এ কথা আমার এবং আমাদের জানা আছে। দেশের লোকের হাত থেকে যে অপযশ ও অপমান আমার ভাগ্যে পৌঁছেছে তার পরিমাণ নিতান্ত অল্প হয়নি এবং এতকাল তা আমি নিঃশব্দে বহন করে এসেছি। ….”।
এ ভাষণে তিনি আরও বলেন- “অতএব আজ যখন সমস্ত দেশের জনসাধারণের প্রতিনিধিরূপে আপনারা আমাকে সম্মান-উপহার দিতে প্রবৃত্ত হয়েছেন তখন সে সম্মান কেমন করে আমি নির্লজ্জভাবে গ্রহণ করব? এ সম্মান আমি কতদিনই বা রক্ষা করব? আমার আজকের এ দিন তো চিরদিন থাকবে না, আবার ভাটার বেলা আসবে তখন পঙ্কতলের সমস্ত দৈন্য আবার তো ধাপে ধাপে প্রকাশ হতে থাকবে।” তিনি অত্যন্ত মার্জিতভাবে অভিনন্দন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সুশোভন ভাষায় তার দীর্ঘকালের বিরোধী ও বিদূষকদের সমালোচনাও করেছেন। তিনি কতটা আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন এবং সত্যকে আঁকড়ে ধরেছেন তা তার কবিতায় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলতেন, জীবনে কারণে অকারণে ছোটখাটো মিথ্যা বলা যায় কিন্তু কবিতায় কখনো মিথ্যা বলা যায় না। রবীন্দ্রনাথ তার ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থে ‘রূপ নারানের কূলে’ কবিতায় সেই কঠিন সত্য উচ্চারণ করেছেন এভাবে:
“রূপ-নারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
……..
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।”
মানব জীবন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা অনেক কঠিন। সেই কঠিনকে সবাই ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে পারে না। তিনি সমালোচকদের বিরোধিতায় কখনো পিছপা হননি। শান্তি নিকতনে যখন বসলেন শিক্ষাগুরুর আসনে। শুরু হলো টাকার টানাটানি। সে সময়ে পাশে দাঁড়ালেন স্ত্রী মৃণালিনী। এ সময় কবির আক্ষেপ এরকম — “কী দুঃখের সে-সব দিন গেছে যখন ছোটোবৌর গহনা পর্যন্ত নিতে হয়েছে। ……এই রকম সাহায্য স্বদেশবাসীর কাছে পেয়েছি।”
এরপর একটি মৃত্যুশোক। সে বড়ই দুঃখের ইতিহাস। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের জন্য পরিশ্রম টানতে পারলেন না মৃণালিনী দেবী। অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বোলপুর থেকে কলকাতায় ফিরে অসুস্থতা আরও বাড়ল। অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করা দায়িত্ব নিলেন রবীন্দ্রনাথ। নার্স নিযুক্ত করলেও ভরসা রাখতে পারলেন না। সব চেষ্টা ব্যর্থ। পরপারে চলে গেলেন মৃণালিনী। শোকে পাথর রবীন্দ্রনাথ। ১১ দিন পর দীনেশ চন্দ্র সেনকে লিখলেন, “ঈশ্বর আমাকে যে শোক দিয়েছেন, তাহা যদি নিরর্থক হয়, তবে এমন বিড়ম্বনা আর কি হতে পারে। ইহা আমি মাথা নিচু করিয়া গ্রহণ করিলাম।”
ছোট ভাই বুধেন্দ্রনাথ যখন মারা যান রবীন্দ্রনাথ তখন এতই ছোট যে সেই মৃত্যু স্মৃতিতে দাগ কাটেনি। দাগ কাটল মায়ের মৃত্যু। ১৮৭৫ সাল। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১০ মার্চে পরপারে চলে গেলেন মা সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথের তখন সাড়ে ১৩ বছর, “প্রভাতে উঠিয়া যখন মা”র মৃত্যু সংবাদ শুনিলাম তখনো সে কথাটার অর্থ স¤পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম, তাঁর সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপর শয়ান। কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না।” মৃত্যুশোকের বড় ধাক্কা খেলেন ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল। নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করলেন। শোকগ্রস্ত রবীন্দ্রনাথের জীবনের এ এক বড় ধাক্কা।
৩৩ বছর পর, অমিয় চক্রবর্তীকে চিঠিতে লিখলেন নতুন বৌঠানের কথা, “তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমার পায়ের নীচে থেকে যেন পৃথিবী সরে গেল।” নতুন বৌঠানের মৃত্যুতে খুব একা হয়ে পড়েন কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বস্ত্র ব্যবসায়ী এবং খ্যাতিমান প্রবন্ধকার ছিলেন ১৮৯৯ সালের ২০ আগস্ট অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অকালপ্রয়াত ভাইপোর মৃত্যুতেও প্রচ- আঘাত পেয়েছিলেন কবি। এরপর বড় ধাক্কা খেলেন স্ত্রীর মৃত্যুতে। স্ত্রী হারিয়ে কবি হতবিহবল হয়ে পড়েন। তাইতো লিখেন-
“এই অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দনে ‘যেতে নাহি দিব’। হায়,
তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়।”
১৯০২ সালে কবি পতœীর মৃত্যুর পর ভীষণ বেদনাবোধ কবির জীবনকে পাতা ঝরা বৃক্ষে রূপান্তরিত করল। এরপরও কবি অসীম ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করেছেন আপনজনদের মৃত্যু। ক্লান্তি ভুলার শক্তি প্রার্থনা করেছেন বিধাতার কাছে —
“ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু,
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু।
…… এই দীনতা কৃষ্ণা করো প্রভু
পিছন পানে তাকাই যদি কভু।”
সামলে উঠতে না উঠতেই সামনে এলো আরও বড় দুঃখের দিন। স্ত্রী মারা যাওয়ার নয় মাস পরে চলে গেলেন মেজ মেয়ে রেণুকা। বাবা রবীন্দ্রনাথের আদরের ‘রানী’। দশ বছর বয়সে রেণুকার বিয়ে হয় ১৯০১ সালের ১৫ জুনে। বিয়ের এক বছরের মাথায় অসুস্থতা বাড়তে থাকে। প্রথমে জ্বর। এরপর কাশি। আষাঢ় মাস। অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। ১৯০৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। বাবার হাত ধরে শুয়ে আছে রেণুকা। বাবার কাছে শেষ আবদার, বাবা একবার পিতা নোহসি বলো। বাবার কাছ থেকে উপনিষদের মহামন্ত্র শুনতে-শুনতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন রেণুকা। রেণুকার মৃত্যুর এক বছর এক মাস চার দিন পর পরপারে চলে গেলেন বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রিয় বন্ধু মোহিতচন্দ্র মারা গেলেন। এবার পুত্র হারানোর শোক। পুত্র শমীন্দ্রনাথকে হারাতে চলেছেন কবি।
শমীর সঙ্গে কবির চেহারার মিল সবার চোখে পড়ত। মিল ছিল আচরণে। মিল ছিল স্বভাবে। ১৬ অক্টোবর, সাল ১৯০৭। বিজয়া দশমীর দিন শ্রীশচন্দ্রের ছেলে শমীর বন্ধু সরোজচন্দ্রের সঙ্গে মুঙ্গেরে রওনা হয় শমী। সরোজের নানাবাড়ি। কয়েক দিন পর শান্তিনিকেতন ফেরার কথা। পথ চেয়ে আছেন কবি। খবর এলো, শমীর কলেরা হয়েছে। অসহায় বাবা। চিকিৎসক সঙ্গে নিয়ে ছুটলেন মুঙ্গেরে। সব চেষ্টা ব্যর্থ। ১১ বছরের শমীন্দ্র চলে যায় পরপারে।
শেষকৃত্য হলো মুঙ্গেরের শ্মশানে। গেলেন না বাবা। অন্যরা শ্মশান থেকে ফিরে এসে দেখলেন পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে আছেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। রাতেই ফিরে এলেন শান্তিনিকেতন। শব্দহীন কান্নায় ভারী হয়ে উঠল শান্তিনিকেতনের বাতাস।
মাধুরীলতা। ঠাকুরবাড়ির আদরের বেলা। ১২ বছর বয়সে বেলা বিয়ে হয়। জামাই কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর তৃতীয় পুত্র শরৎচন্দ্র। শরৎ কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। অনেক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বেলার বিয়ে হয়। কিন্তু জামাই শরৎচন্দ্রের সঙ্গে কন্যার সুস¤পর্ক হলো না। প্রথম বিরোধের শুরু দুই জামাইয়ের মধ্যে। কবির ইচ্ছায় দুই মেয়ে-জামাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বাস করছেন। কনিষ্ঠ জামাই নগেন্দ্রনাথকে দিলেন জমিদারি, আদি ব্রাহ্মসমাজ, জোড়াসাঁকোর বাড়ি ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার দায়িত্ব। পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও জামাই শরৎচন্দ্রকে বিশেষ কিছু না দিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যান কবি। এটাই বিরোধের প্রধান কারণ। দুই জামাই ও মেয়েদের বিরোধে শাস্তি পেলেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। দুঃখে ভারী হলেন নোবেলপ্রাপ্তির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। অসুস্থ হলেন কন্যা মাধুরীলতা। জ্বর দিয়ে শুরু। ধরা পড়ল যক্ষ্মা। ছুটে গেলেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। কয়েক দিনের অসুস্থতার পর মারা যান মাধুরীলতা। দিনটি ১৯১৮ সালের ১৬ মে। এদিকে দিনে-দিনে তীব্র হচ্ছে কবিগুরুর অর্থসংকট। কখনো বিজ্ঞাপনের মডেল আবার বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লিখে দিচ্ছেন শুধু টাকার জন্য। পত্রিকায় কবিতা ছাপতে চাইলে বলছেন, কত টাকা দেবে? কন্যা মাধুরীলতা মারা যাওয়ার তিন বছরের মাথায় মারা যান দাদা সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯২২ সালের ৩০ জানুয়ারি। পরের বছর ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মারা গেলেন ¯েœহধন্য সুকুমার রায়। এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান কাছের বন্ধু উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ারসন। বন্ধু পিয়ারসনের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় মারা গেলেন বড় দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মৃত্যু শোকে বিপর্যস্ত কবি। দুঃখে জর্জরিত রবীন্দ্রনাথ। নাম যশ আর খ্যাতির আড়ালে কিছু কাছের মানুষের দেওয়া দুঃখ ব্যথা, অসময়ে ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, ভাই হারানোর যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছেন বিশ্বকবি নিদারুণভাবে।
তাইতো তিনি এমনভাবে বলতে পেরেছেন –
“মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
এই সূর্যকরে এই পু®িপত কাননে
জীবন্ত হৃদয়- মাঝে যদি স্থান পাই।”