1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

খোরাকি নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত চার লাখ কৃষক পরিবার

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩

শামস শামীম ::
গত বছরের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভাঁড়ারের শুকনো ধান, চালসহ নিত্য ব্যবহার্য্য সবকিছু নষ্ট হয়েছিল হাওরের প্রায় চার লাখ কৃষক পরিবারের। শতাব্দীর ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা ভুলতে পারছেননা জেলাবাসী। বসতঘর, যোগাযোগসহ সব ধরনের অবকাঠামোও ক্ষতি ছিল সীমাহীন। দরিদ্র পরিবারের কাঁচা বসতঘরও কয়েকদিন নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে খোরাকি সংগ্রহ করতে ধারদেনাসহ নানাভাবে বেগ পেতে হয়েছে প্রান্তিক ও অসচ্ছল কৃষকদের। এবারের বোরো মওসুমে তাই দেনা করে জমি চাষ করেছিলেন বেশিরভাগ কৃষক। সেই কৃষকদের সবাই এখন একমাত্র বোরো ফসল গোলায় তোলার লড়াইয়ে নেমেছেন। উদয়াস্ত তারা হাওরে অবস্থান করছেন। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোসহ গবাদিপশুর খাদ্য সংগ্রহ করছেন তারা। তাদেরকে সঙ্গ দিচ্ছেন শিশু-কিশোর সন্তান-সন্ততিসহ ঘরের নারীরাও। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার হাওরে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আরো ১৫ দিন সময় পেলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাওরের সব ফসল গোলায় তোলতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি বছরের খোরাকি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবেনা বলে মনে করছেন তারা।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে জেলার সব হাওরেই ধান কাটার ধুম পড়েছে। ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার হাওরে ও হাওর এলাকার বাইরে গড়ে ৩৭ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওরে ধান কাটা হয়েছে ৫০ ভাগ। প্রতিদিন গড়ে ৬ ভাগ ধান কাটা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৭ ভাগ। এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
ধান কাটার জন্য সাধারণ শ্রমিকের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার কম্বাইন হার্ভেস্টর যন্ত্রও কাজ করছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কম্বাইন হার্ভেস্টরে একসঙ্গে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করা যায়। এতে কৃষকের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয় না। যার ফলে সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে জমির ধান কাটতে পারছেন তারা।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা মেশিনে ধান কাটতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ দিতে হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত মেশিন ও শ্রমিক পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ১ হাজার কম্বাইন হার্ভেস্টরের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা, ভোলা, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও আরো ১১ হাজার শ্রমিক ধান কাটতে এসেছেন। যার ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার শ্রমিক সংকট অনেকটা কম।
কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা। এই জেলায় প্রায় চার লাখ চাষী পরিবার রয়েছে। কৃষকরা হাওরের বোরো থেকে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করেন। এছাড়াও আউশ, আমন মিলিয়ে আরো প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। জেলায় ৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পূরণ করে আরো প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে হাওরে। এবার হাওরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সংশ্লিষ্টরা জানান।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের শাহগঞ্জ গ্রামের কৃষক রাসেন্দ্র দাস বলেন, ‘ইবার খুব বালা ফসল অইছে। দিন বালা থাকলে কাইট্যাকুইট্যা শ্যাষ করতাম পারমু। কোনবাদি তুলিলেই লাভ পাইমু।’ তিনি জানান, গত বছর বন্যায় তার ভাঁড়ারের শুকনো ধান যা বছরের খোরাকির জন্য রেখেছিলেন কয়েকদিন ডুবে থাকায় নষ্ট হয়ে যায়। মাঠ ঘাট উঠোন সব ডুবে যাওয়ায় শুকনো ধান আর শুকাতে পারেননি। তাই সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে এবার ঋণ করে কৃষিকাজ করেছেন। ফসল ভালো হওয়ায় খোরাকি সংগ্রহের পাশাপাশি ঋণও পরিশোধ করতে পারবে বলে খলায় ধান শুকাতে শুকাতে তৃপ্তি নিয়ে এসব জানান তিনি।
একই হাওরের পাটাবুকা গ্রামের কিষাণী নিপা আক্তার বলেন, ‘গ্যাছে বন্যায় ঘুরদুয়ার ধান চাল সব নষ্ট কইরা গেছে। আমরা ছোট গিরস্ত। অনেক ক্ষতি অইছে। ইবার ঋণপিন কইরা বোরো খেত লাগাইছলাম। কিছু ধান নষ্ট অইগিছে রোগে। তবে যেতা আছে সবতা তুলতে পারলে বছরের খোরাকির জন্য আর সমইস্যা অইতোনা। মহাজনের সুদও পরিশোধ করতাম পারমু’।
একই গ্রামের কৃষক ফয়েজ আলম বলেন, ‘গত বইন্যায় ঘরদুয়ার নষ্ট অওয়ায় আরেক বাড়ি আমার শিশু ছেলেকে নিয়া গেছলাম। ছেলে একসিডেন্ট করছিল। সুদে টেকা আইন্যা তারে চিকিৎসা করাইছি ও ধান লাগাইছি। আল্লায় দিলে ফসল বালা অইছে। আর ১০-১৫ দিন সময় ইলা ভালা দিলে আর সমস্যা অইতোনা।’ তবে ধানের মূল্য বাড়ানোর জন্য দাবি জানান এই কৃষক। পাশাপাশি মেশিনে ধান কাটার রেইট কমানোর দাবি জানান তিনি। তিনি জানান, প্রতি ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটাতে মেশিনে খরচ হয় প্রয় ২ হাজার টাকা।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, গত বন্যায় আমাদের বড়ো ক্ষতি হয়েছে। এবার বাম্পার ফলনে সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার তৃপ্তির হাসি দেখেছি কৃষকের মাঝে। আর ১৫ দিন সময় পেলে আমাদের সব ফসল গোলায় তুলতে পারবো আমরা। এতে খোরাকিতে কোন টান পড়বেনা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরের সব ধান এখন কাটার উপযুক্ত। আমরা দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ ২৩ এপ্রিলের পর থেকে মেঘালয়ে টানা ভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কৃষকরা হাওরের ৫০ ভাগ জমির ধান কেটে তুলেছেন। পূর্বাভাসের আগেই আমরা ৭০ ভাগের মতো হাওরের ফসল গোলায় তোলতে সক্ষম হবো। পুরো ফসল কৃষক গোলায় তোলতে পারলে জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে আরো প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য কৃষকরা উদ্বৃত্ত রাখতে পারবেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, এবার শ্রমিক নিয়ে কোন সংকট নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com