আল্লাহতায়ালার হুকুমে বান্দা পুরো মাস রোজা রেখেছে। তিনি যেভাবে হুকুম করেছেন, সেভাবেই রাখতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহর হুকুম পালন করা অসহায় বান্দার জন্য কি এত সহজ! আল্লাহ বান্দার দুর্বলতা স¤পর্কে ভালোভাবে জানেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানেন তার উম্মতের দুর্বলতার কথা। তাই রোজা রাখতে গিয়ে যে টুকটাক ভুল হয়ে যায়, তার কাফফারাস্বরূপ সদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন।
পাশাপাশি রোজার মাধ্যমে রোজাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে উপবাসে থাকা অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষদের কষ্ট। রমজান শেষে ঈদের দিন সেই মানুষদের মুখেও যেন ফুটে ওঠে আনন্দের রেখা, তাদের ঘরেও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা হয়, সে জন্য বিত্তবানদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে সদকাতুল ফিতর। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সদাকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোজাদারকে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা-কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসেবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাজের আগে আদায় করবে সেটা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যে নামাজের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে। সুনানে আবু দাউদ : ১৬০৯
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ স¤পদ রয়েছে, তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে। এ বছর বাংলাদেশে জনপ্রতি ফিতরার সর্বনি¤œ হার ১১৫ টাকা নির্ধারণ করেছে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি। আর সর্বোচ্চ ফিতরা হলো ২ হাজার ৬৪০ টাকা। গত বছর সর্বনি¤œ ফিতরা ছিল ৭৫ আর সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা।
ইসলামের বিধানে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যবের যেকোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন। আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যবের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রামে উল্লিখিত পণ্যের বাজারমূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।
ফিতরাসংক্রান্ত হাদিসে পাঁচটি পণ্যের যেকোনোটি দ্বারা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেন মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো একটি দ্বারা তা আদায় করতে পারেন। কালপরিক্রমায়, হাদিসে বর্ণিত পাঁচ প্রকারের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। আর সেটা ধরেই বর্তমানে ন্যূনতম ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে এ যুগে সর্বশ্রেণির জন্য এমনকি স¤পদশালীদের জন্যও শুধু গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কি করে সমীচীন? কিন্তু সারা দেশের সব শ্রেণির লোক বছর বছর ধরে সর্বনি¤œ মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে এভাবে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবাই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে। সব শ্রেণির লোক যদি সবচেয়ে নি¤œ মূল্যমানের দ্রব্য দিয়ে নিয়মিত ফিতরা আদায় করেন, তবে হাদিসে বর্ণিত অন্য চারটি পণ্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের ওপর আমল করবে কে?
উচিত ছিল, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে ফিতরা আদায়ের সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়ে আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দেবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিশমিশের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটাই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেইন ও তাবে তাবেইনের স্বর্ণযুগে। আর আমরা পালন করছি সুবিধা মতো!
এ অবস্থায় এই দেশের ফিতরা আদায়কারীদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিসে বর্ণিত পণ্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের পণ্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। যেখানে রমজানে ইফতার আয়োজনের নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না।