1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আত্তীকৃত শিক্ষকরাও মানুষ : মোঃ শাহাদত হোসেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

সম্প্রতি ৫৯৪ জন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তার সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগহণের জটিলতার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টির নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সম্মানিত শিক্ষক আইন ও বিধির বিষয়টি নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁদের এ দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে শিক্ষক হিসেবে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এছাড়া সকল ক্যাডার কর্মকর্তাগণকে মানবিকভাবে ভাবতে ভাবিয়েছে। সেজন্য ড. রুহুল কাদীর স্যার, কামাল আহমেদ স্যার, জনাব আব্দুল হক, জনাব আব্দুর রাজ্জাকসহ মানবিক মূল্যবোধস¤পন্ন মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা শুধু বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের নেতাই নন, বরং ভবিষ্যৎ সময় নিশ্চিত করবে যে তাঁরা জাতিরও নেতা। ক্যাডারের নেতৃত্বদানের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকায় একদিন হয়ত তাঁরা জাতীয় নেতৃত্বে আসীন হবেন।
একজন মানুষ হিসেবে সকলের কাছে দুটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। প্রথমত: বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম তথা ফেসবুকে আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে যেসব ভাষায় অভিহিত করা হয়, তা কি শোভন? দ্বিতীয়ত: আইনসঙ্গত অধিকার থেকে গায়ের জোরে তাদেরকে বঞ্চিত করা কি যৌক্তিক?
খুব সহজভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করা যে কোন সরকারের নীতি। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর থেকে বেসরকারি কলেজগুলোকে জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বাংলাদেশের ১০/১৫টি কলেজ ছাড়া বাকিগুলো জাতীয়করণের মাধ্যমেই সরকারি হয়েছে। আজ যে শিক্ষা ক্যাডারে ১৫ হাজার সদস্য আছেন বা অনুরূপ সংখ্যক পদ আছে, তা কিন্তু জাতীয়করণেরই ফল। বেসরকারি কলেজ, কলেজের পদ জাতীয়করণ করা না হলে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) এতবড় ক্যাডারে পরিণত হতে পারত না। এত বেশি সংখ্যক শিক্ষকের ক্যাডার পদে নিয়োগের সুযোগ হত না।
১৯৮১ বিধি যখন জারি হয় (কার্যকর- ১৯৭৮ থেকে) তখন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) নামে কোন ক্যাডার ছিল না। তাই ঐ বিধিতে ক্যাডারভুক্তি হওয়া বা ক্যাডারভুক্তি না হওয়ার প্রশ্ন অবান্তর। অথচ ঐ বিধিতে ক্যাডারভুক্তি নেই বলে আত্তীকৃত শিক্ষকরা নন ক্যাডার বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, এ বিধির অনেকেই নানা প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বা করছেন। রাষ্ট্র তা ওয়াকিবহাল আছে। সরকার জাতীয় স্বার্থে, শিক্ষার স্বার্থে উক্ত বিধি প্রণয়ন করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে এ বিধির অধীনেই বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয়করণ হয়েছে।
২০০০ বিধিতে স্পষ্ট করে শর্তসাপেক্ষ ক্যাডারভুক্তির কথা বলা আছে। সে মোতাবেক ঐ বিধিতে শর্তযুক্ত কাউকে ক্যাডার বহির্ভূত করার সুযোগ নেই। অথচ একটি মহল থেকে সে দাবি বার বার করা হয়, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-গোষ্ঠী মামলায় যেতে বাধ্য হন। এতে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতিসহ নানা কার্যক্রম বিলম্বিত হয় বা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এ বিধি প্রণয়নে শিক্ষামন্ত্রণালয়, মাউশি, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সমিতি ও আত্তীকৃত শিক্ষক নেতারা যৌথভাবে কাজ করেছিলেন।
অর্থাৎ ১৯৮১ ও ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকগণ অবশ্যই ক্যাডার এবং তারা বর্তমানে ক্যাডার পদেই কর্মরত আছেন। যখন তাদেরকে ক্যাডারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়, শুধু তখনই তারা মামলার মাধ্যমে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। এবং করবেন, আর এটাই স্বাভাবিক।
২০১৮ বিধিতে স্পষ্ট করে আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে ননক্যাডার ঘোষণা করা হয়েছে। বিধির কোন পরিবর্তন না হলে তাদের পক্ষে আর ক্যাডার হওয়ার সুযোগ নেই। সম্ভবত তাই ২০১৮ বিধি নিয়ে বা এ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের নিয়ে কোন সমস্যাও নেই। ভবিষ্যতেও সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়।
সমস্যা হয় ১৯৮১ ও ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের নিয়ে। ১৯৮১ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের সংখ্যা বর্তমানে একশর চেয়েও কম। অন্যদিকে ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের সংখ্যা ২/৩ শত হতে পারে। অর্থাৎ ৩/৪ শত লোকের সাথে প্রায় ১৫ হাজার ক্যাডার সদস্যের লড়াইয়ে সমাজে, রাষ্ট্রে ও ক্যাডারে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর তা হচ্ছে মূলত সরকারি আইন ও বিধিকে অবজ্ঞা করার জন্য, বিধি ও আইন না মানার জন্য।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮১ ও ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকগণ ক্যাডার বহির্ভূত নন, তাদের ক্যাডার বহির্ভূত করে এখন পর্যন্ত কোন প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি। তদুপরি বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য অধিকার, বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি দিতে বাধাগ্রস্ত করায় বাধ্য হয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিগণ আইনের আশ্রয় প্রত্যাশা করেন। আর এর ফলেই নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় বা হচ্ছে বা হবে।
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে সকলেরই আইন, বিধি ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আইন, বিধি ও সংবিধান পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চলতে পারে, কিন্তু বর্তমানে যা বিদ্যমান আছে তা মেনে নেয়া সকলের কর্তব্য। এছাড়া সঠিক তথ্য সরবরাহ করা, জানা ও প্রয়োগ সকলেরই কাম্য।
সত্যিই আশার কথা যে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা আইন ও বিধি অনুযায়ী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথাটি ¯পষ্ট করেই তুলে ধরেছেন। একজন শিক্ষক যে একটি আলোকবর্তিকা, সমাজ ও রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক, তাদের মতামত ও লেখায় তা আবারো প্রমাণিত হলো। আসলে এটি সত্যি যে, মামলাই একমাত্র সুরাহা নয়। আলোচনা ও ন্যায্যতা সুরাহার বড় হাতিয়ার। যেসব সমস্যা বিদ্যমান আইন ও বিধি দ্বারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়, সেসব বিষয় কোর্টে নিয়ে যাওয়া কারো কাম্য হতে পারে না।
১৯৮১ ও ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকগণ তাদের ঊর্ধ্বতন অফিস দ্বারা নির্যাতিত না হলে মামলায় যেতেন না। এসব মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে সমিতির যে টাকা খরচ হয়েছে তার সামান্য অংশ খরচ করে পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট বাতিল, ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সে অবস্থান, তৃতীয় গ্রেড, পরীক্ষায় শিক্ষকদেরকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি আদায় করা সম্ভব হতো। ১৯৮১ ও ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকগণ তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বারে দ্বারে হেঁটেছেন, সমাধান না পেয়ে আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি সত্য যে, ২০১৮ বিধি অনুযায়ী আত্তীকৃত কোন কলেজ শিক্ষকের পক্ষে যেমন ক্যাডারভুক্তির সুযোগ নেই, তেমনি ১৯৮১ ও ২০০০ বিধি মোতাবেক আত্তীকৃত কোন কলেজ শিক্ষকদের কাউকে ক্যাডারের বাইরে রাখারও আইনগত ভিত্তি নেই।
[লেখক- মোঃ শাহাদত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ]

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com