1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

তীব্র তাপদাহেও হাওরে চলছে ধান কাটা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

 

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের ছোট বড়ো সবগুলো হাওরেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। তীব্র তাপদাহের কারণে ধান কাটতে কৃষকদের কষ্ট হলেও ধান কেটে মাড়াই শেষে শুকিয়ে গোলাজাত করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। টানা ২০ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব হাওরের ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে বিভিন্ন স্থানে লোকায়ত বিশ্বাস থেকে নিরাপদে ধান গোলায় তোলতে নানা আচারাদি পালিত হতে দেখা গেছে। ক্ষীরবাস ব্রত করেই কৃষকদের হাওরে ধান কাটতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ধান কাটায় বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকায় তারা সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় বালু পাথর মহাল ফাজিলপুর কোয়ারিতে ১ মাসের জন্য বালু আহরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এই মহালে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিক বালু পাথর আহরণ করে।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর, তাহিরপুর উপজেলার শনি ও মাটিয়ান হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের কান্দায় (তীরে) খলা (ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের স্থান) খলায় নারী, শিশু ও তরুণীরা ধান শুকাচ্ছে। কোথাও কোথাও মহিষের গাড়ি, কোথাও অটো রিকসা, নৌকা করেও জমি থেকে কাটা ধান খলায় নিয়ে আসতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে হাওরের ফসল নির্বিঘেœ গোলায় তোলতে লোকায়ত আচারাদি পালিত হতে দেখা গেছে। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষকরা হাওরে গিয়ে খাগঘাস কেটে এনে ধুপ, ফুল, তুলসি পাতা জলে ডুবিয়ে হাওরে ছিটিয়ে দিয়েছেন। হাওরের কান্দায় ক্ষীরবাস ব্রত পালন করে সিঁদুর মাখিয়ে দিয়েছেন ধানের ছড়ায়।
হাওর ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা (ধান কাটার মওসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেধে আগত শ্রমিক) দলে দলে এসে ধান কাটতে শুরু করেছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই সপ্তাহেই প্রতিটি হাওরে ধান কাটার ধুম পড়বে। কিছু কিছু এলাকায় বিআর ২৮, ২৯, ৮৮, ৮১ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। ফসল যাতে দ্রুত কেটে গোলায় তোলা যায় সে জন্য সরকার প্রায় ৭৩২টি কম্বাইন হার্ভেস্টরসহ বাইরের জেলা থেকে আরো ২৫০টি কম্বাইন হার্ভেস্টর নিয়ে আসা হয়েছে। এর পাশাপাশি আরো ২৫০টি রিপার মেশিন রয়েছে। প্রতিটি কম্বাইন হার্ভেস্টরে প্রতিদিন ২৫ বিঘা এবং রিপারে প্রায় ৪ বিঘা জমির ধান কাটা যায়। তবে কম্বাইন হার্ভেস্টর হাওরের গভীরে ধান কাটতে না পারায় শ্রমিক দিয়েই গহীন হাওরের ধান কাটতে হয় কৃষকদের।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা সুনামগঞ্জের হাওরে চলতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মে.টন ধান উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়াও রবিবার পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওরে ধান কর্তনের গড় ২০ ভাগ। এখন প্রতিদিন ৪-৫ ভাগ ধান কাটা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কৃষক রিপচান হাবিব বলেন, আমাদের এলাকায় ব্লাস্টে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ধান ভালো হয়েছে। জমির ধানও পেকে কাটার উপযুক্ত হয়েছে। কাটাও শুরু হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। তবে দুর্গম এলাকার কারণে শ্রমিক সংকট রয়েছে। তাহিরপুরের সবচেয়ে বড় বালুমহাল ফাজিলপুরে এক মাসের জন্য বালু আহরণ বন্ধ করলে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিককে হাওরে নিয়ে আসা যেতো।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের গ্রাম শাহগঞ্জের কৃষক মো. সোহেল মিয়া বলেন, এবার ফলন বাম্পার হয়েছে। তবে খরচও বেশি হয়েছে। কারণ সার বীজ কীটনাশক ডিজেল সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত ধান কাটা শেষ করতে পারলে আমরা পুষিয়ে নেব। তিনি আরো বলেন, মেশিনে ধান কাটলে মেশিনম্যান অনেক টাকা চায়।
একই হাওরের শাহগঞ্জ গ্রামের কৃষক রাশেন্দ্র দাস বলেন, ইবার বালা ধান অইছে। আর ২০-২৫ দিন সময় পাইলেই অইলো। সব ধান ঘরো তুলিলিমু।
শিক্ষিকা ও সংস্কৃতিকর্মী পলি রায় বলেন, হাওরকে কৃষকরা লক্ষ্মীর ভা-ার মনে করেন। তাই তারা নির্বিঘেœ ধান গোলায় তোলতে ক্ষেতে গিয়ে ক্ষীরবাস ব্রত করেই ধান কাটা শুরু করেছেন। ধোপ, তুলসি পাতা জলে ডুবিয়ে হাওরে ছিটিয়ে দিয়েছেন। ধানগাছে সিঁদুরের ছিটা দিয়েছেন। পরে হাওরের কান্দায় বিভিন্ন পিঠা পায়েসে ভোগ দিয়েছেন। বৈশাখে এভাবে লোকায়ত নানা আচারাদি এখনো বিভিন্ন এলাকায় পালিত হয়।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, আমাদের সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে হাওরের কৃষকের ধান দ্রুত কাটতে উন্নত হার্ভেস্টর দিয়েছে। যেগুলো একসঙ্গে ধান কাটার পাশাপাশি ধান মাড়াইও করে। এতে কৃষকের কষ্ট কমছে। কাজ দ্রুত হচ্ছে। আগামী দুইটা সপ্তাহ পেয়ে গেলে হাওরের ফসল মোটামুটি গোলায় তোলতে সক্ষম হবেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, আমাদের হিসেবে সুনামগঞ্জের ১৪২টি হাওরের সব কটিতেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে শাল্লা, দিরাই, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে আমরা ধান কাটা শেষ করতে পারবো। এই সপ্তাহে প্রতিদিন ৪-৫ ভাগ ধান কাটা হবে। রবিবার পর্যন্ত আমাদের আবাদকৃত জমির মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মকসুদ চৌধুরী বলেন, হাওরে ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত হার্ভেস্টর রয়েছে। তারপরও শ্রমিকের দরকার হলে আমরা ফাজিলপুর বালু মহাল একমাসের জন্য স্থগিত রেখে শ্রমিকদের হাওরে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাবো।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com