গত সোমবারের (১১ এপ্রিল ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘পথশিশুরা দেশের দারিদ্র্যের বহিঃপ্রকাশ’। এই বক্তব্যটি বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান মহোদয়ের। তিনি মাঝে মাঝেই, তাঁর শ্রোতাদেরকে অবাক করে দিয়ে, এইভাবে সত্যোচ্চারণে সাহসী ও প্রজ্জ্বোল হয়ে উঠেন। তাঁর সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের কেউ এমন করে সাধারণত সত্যোচ্চারণে কখনওই মনোনিবেশ করেন না, বরং কখনও কখনও তাঁদের উচ্চারণগুলো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তও রীতিমত ভীত করে তোলে অথবা সত্যপ্রকাশের ভয়ে তাঁরা তথাকথিত ‘সুশীল’দের মতো সুকৌশলে নীরবতা অবলম্বন করেন কিংবা সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যান। মনে হয়, এবংবিধ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যতিক্রমী বক্তা। যেমন তিনি মনে করেন, ‘আমাদের মতো অনুন্নত দেশ বা কম উন্নত দেশে দারিদ্র্যমুক্তকরণের অন্যতম জায়গা হচ্ছে এই পথশিশু। পথশিশুরা দেশের দারিদ্র্যের বহিঃপ্রকাশ।’ অথচ সরকার পক্ষ থেকে কিন্তু বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় ধনবৈষম্য বৃদ্ধির ফল্গুধারাকে প্রকারান্তরে উপেক্ষাই করা হয়, যে-ধনবৈষম্যের অনিবার্য ফসল পথশিশুরা।
পথশিশুরা কেবল রাজধানীতে নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সুনামগঞ্জশহরও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও পথশিশুরা আছে। সে বিষয়ে বিস্তৃত করে বলার এখানে কোনও অবকাশ নেই। আমরা মনে করি, দেশের বর্তমান উন্নয়নের অপ্রতিহত ধারাকে আরও অধিক অর্থবহ করে তোলতে হলে সমগ্র দেশের পথশিুদের একটি পরিসংখ্যান নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা দরকার। তাছাড়া তাদের কোনও একটি পেশায় নিয়োজনের নিশ্চয়তাও দিতে হবে। এইরূপ একটি রূপকল্প প্রণয়নের এখনই উপযুক্ত সময় এবং সেটা দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই নেওয়া দরকার। কারণ এই পথশিশুদেরকে উন্নয়নের সহায়ক জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা প্রকৃতপ্রস্তাবে সময়েরই দাবি, যে-দাবিকে উপেক্ষা করে উন্নয়নকে নিশ্চিত করা যাবে না। এ বিষয়ে উন্নয়ন সহায়ক ও কার্যকর একটা কীছু করা যায় কি-না আমাদের জনবান্ধব সরকার ও জনদরদি নেতা পরিকল্পনামন্ত্রী ভেবে দেখবেন কি?