শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে পাইকারি থেকে খুচরায় সবজির দামে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের পার্থক্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। সঠিকভাবে বাজার তদারকির অভাবে বাজারের এমন দশা বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পৌর শহরের পুরাতন জেল রোড এলাকার সুরমা নদী সংলগ্ন সবজির মোকাম। প্রতিদিন ভোরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎপাদনকৃত সবজি নৌপথে নিয়ে আসা হয় এই মোকামে। এখান থেকে পাইকারিতে সবজি ক্রয় করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পরে এগুলো নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাজার ও জেলার বাইরে।
সরেজমিনে সবজি মোকামে গিয়ে জানাযায়, উৎপাদন মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় পাইকারি বাজারে কমে যাচ্ছে সবজির যোগান। এর ফলে বেড়েই চলছে সব রকমের সবজির দাম।
মেসার্স লোকনাথ বাণিজ্যালয়ের আড়তদার প্রসেনজিত দে বলেন, শীত মৌসুম শেষ হওয়ায় সবজি উৎপাদন কমে গেছে। তাছাড়া শিলাবৃষ্টি ও বৃষ্টিপাতে চাষীদের অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। বাজারে আগের চেয়ে সবজি কম আসছে। দুয়েকদিন ধরে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে টমেটো কেজিতে ১৫-১৮ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতি পিস ৩০-৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ কেজি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ধরন বেঁধে পটল ৭০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০, ঢেরশ ৬০, চিচিঙা ৪০-৪৫ টাকা ও গাজর কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। এছাড়া লতির দাম ১০০ ছুঁই ছুঁই। সজনে প্রতি কেজি পাইকারি দর ৫০ টাকা, ধনিয়া কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা, পেঁপে ৩২ টাকা, পুঁইশাখ ৩০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৩০-৩২ টাকা, বেগুন ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, শহরের খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে ১৫ টাকার টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, ২০ টাকার বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ৬০ টাকার ঢেরশ ৯০ টাকা, ৩২ টাকার পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, ৩০ টাকার ধনিয়া ৬০ টাকা, ৫০ টাকার মূলা ৮০ টাকা, ৫০ টাকার সজনে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য সবজির দামও বেশি।
পাইকারি বাজার আর খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করার বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের জেল রোড এলাকার রুকন নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, আমার ছেলে সবজি কিনে। আমি বেচাবিকি করি। সে যত দাম বলে যায় সেই দামে সবজি বিক্রি করি।
আব্দুল হামিদ নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতিদিন সবজি ক্রয় করে খুচরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। পাইকারি দাম বেশি তাই আমাদের একটু দামে বেচতে হয়। না হলে আমাদের লাভ হয় না।
সবজির বাজরের উত্তাপে নাভিশ্বাসের দশা ক্রেতাদের। দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তদারকি চেয়েছেন তারা। রহুল আমিন নামের এক ক্রেতা বলেন, সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে নাই। প্রতিদিন সবজির দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? ৫০ টাকা দিয়ে ন্যূনতম এক কেজি সবজি কিনা যায় না। যে যার মতো দাম নিচ্ছে। বাজারে তদারকি নেই। বাজার নিয়মিত তদারকি হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারতো না।
বাজার তদারকি সম্পর্কে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে আমরা প্রতিদিন বাজার তদারকি করি। গত শুক্রবার সুনামগঞ্জ শহরে নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান করেছি। সবজির বাজারেও আমাদের অভিযান পরিচালনা হবে।