‘সরেজমিন একাধিক বিদ্যালয়ের মালামাল ক্রয়ের ভাউচার অনুসন্ধান করে দেখা যায়, প্রতি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত এবারের ১৮ হাজার টাকার মধ্যে ১৪ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। আর ৪ হাজার টাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাউচারে ব্যবহার করা একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে দেখা যায়, তারা কেউ সেই টাকা পাননি। কৌশলে মধ্যনগর ক্লাস্টারের ৮৫টি বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোনো কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা সিন্ডিকেটের পকেটস্থ হয়েছে।’ এই মর্মে একটি স্থানীয় পত্রিকায় ‘ভুয়া ভাউচারে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাওয়া’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে গত বুধবার (৫ এপ্রিল ২০২৩) এবং প্রকারান্তরে দেশের কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সবখানেÑসামাজিক-রাজনীতিক-আর্থনীতিক বিস্তৃতির প্রতিটি প্রশাসনিক ক্ষেত্র, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার প্রতি ইঞ্চিতে বিদ্যমান দুর্নীতি বিস্তারের বিশালতা ও গভীরতাকে প্রতিপন্ন করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ১৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘স্কুল সেক্টর রেসপন্স’ প্রকল্পের (সিএসএসআর) অধীনে সুরক্ষা সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকার মালামাল ক্রয়ের স্থলে ১৪ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করে বাকি ৪ হাজার টাকা পরিচ্ছন্নতা কাজের ভুয়া ভাউচার সৃজন করে বিলকুল আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মালামাল ক্রয়ের জন্য মধ্যনগর উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক নেতাদের নিয়ে টিম (সিন্ডিকেট) গঠন করা হয় এবং টাকা উত্তোলন করে টিমের হাতে টাকা দিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে বাধ্য করা হয়েছে। পরে ওই টিমের পক্ষ থেকে মালামাল ক্রয় করে বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। আর প্রত্যেক স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৪ হাজার টাকা টিমের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।
এইভাবে এই প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দকৃত টাকায় মালামাল ক্রয় ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। অভিজ্ঞমহলের ধারণা এইরূপ দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে প্রতিনিয়ত অপ্রতিহতভাবে ঘটেই চলেছে এবং উন্নতির মূলে কুঠারাঘাত করছে। দেশজুড়া এই দুর্নীতিবাজ চক্র এমনকি একটি বালিশ একতলা থেকে দোতলায় উঠানোর মজুরি হিসেবে ৫/৬ হাজার করে টাকা সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে লুটে নিচ্ছে, ধরা পড়লেও তেমন কোনও শাস্তির সম্মুখিন তাদেরকে করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দির দুই দশক পেরিয়ে এসে দেশকে ডিজিটালাইজড ঘোষণা করে এমন চলতে পারে না। দেশবাসী এবংবিধ দুর্নীতির প্রতিকার চান। তাঁদের পক্ষ থেকে আমরা দুর্নীতিবাজ শিক্ষক চক্রের শাস্তি দাবি করছি, যারা পরিচ্ছন্নতা কাজের ভুয়া ভাউচার সৃজন করে সরকার বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছে।