চয়ন কান্তি দাস ::
দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ফজলুল হক সেলবর্ষী সড়কের সড়ক উন্নয়ন কাজটি এখনো শেষ হয়নি। ঠিকাদারের সীমাহীন গাফিলতিতে কাজটি এখনো ঝুলে রয়েছে। এতে করে এখানকার ১০টি গ্রামের মানুষজনকে দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেলবরষ ইউনিয়নের মনাই নদের তীরঘেঁষা ফজলুল হক সেলবর্ষী সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। এটি এলজিইডি’র অধীন। এই সড়কের ১ কিলো ২০০মিটার সড়কটি পাকাকরণ, সংস্কার ও মেরামত এবং প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৪৪ লাখ ৪৫হাজার ৭৪১টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি কাজটি শুরু করে ওই বছরের ৩০জুন স¤পন্ন করার কথা ছিল। গত বছরে মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঠিকাদার শ্রমিক নিয়োজিত করে সড়কের কাজটি শুরু করেন এবং জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাজটি বন্ধ করে দেন। নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ না হওয়ায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত দুই মাস আগে সড়ক উন্নয়নকাজটি আবার শুরু করা হয়। কিন্তু নিয়মিত কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার তার ইচ্ছেমতো এই কাজটি করিয়ে আসছেন। সড়কটির ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ঠেলাগাড়িসহ প্রতিদিন অর্ধশতাধিক যানবাহন চলাচল করে। সড়ক উন্নয়নকাজটি শেষ না হওয়ায় সেলবরষ ইউনিয়নের মাইজবাড়ি, বীর দক্ষিণ প্রচারপাড়া, বীর দক্ষিণ পশ্চিমপাড়া, বীর দক্ষিণ পূর্বপাড়া, বীর দক্ষিণ নতুন বাড়ি, মাটিকাটা, সলপ, মাটিকাটা, ভাটাপাড়া ও রংপুর গ্রামের স্কুল ও কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন অংশে বক্স কেটে রাখা হয়েছে। সড়কের দুটি স্থানে যৎসামান্য মাটিযুক্ত বালি ও পুরোনো ব্লকের ভাঙা অংশ ফেলা হয়েছে। সেখানে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। তবে এর আগের দিন শুক্রবার দুপুরে ওই সড়কে ৪/৫জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে।
ইজিবাইক চালক তানভীর হাসান (৪০) বলেন, সড়কটার দিহে কারও কুনু নজর নাই। বৃষ্টি অইলে সড়কটার উফুরে পানি জইমা যাওয়ায় এইডার ওফুর দিয়া গাড়ি লইয়া যাওন যায় না। হত্তিদিনই এই সড়কও একসিডেন্ট অইতাছে। এইডার কাম তাড়াতাড়ি শেষ করন দরহার।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামের গৃহিনী লুৎফুন্নাহার বলেন, ম্যালাদিন ধইর্যা সড়কটা বেহাল অইয়া পইড়া আছে। ঠিকাদার সড়কের কাম ধরলেও তিন দিন কাম করালেই দুই দিনই কাম বন্ধ থাকে। সড়কটার কামডা শেষ অইবো কুনদিন?
একই গ্রামের বাসিন্দা শামছুল হুদা বাবু বলেন, সড়কটি দিয়ে আমাদেরকে উপজেলা সদরে আসা যাওয়া করতে হয়। সড়ক উন্নয়ন কাজটিতে কোনোরকম তদারকি নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ও ঠিকাদারের সীমাহীন গাফিলতিতে এখানকার মানুষজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলজিইডির কারও নজরদারি না থাকায় ঠিকাদার তার ইচ্ছেমতো যেনতেনভাবে এই সড়ক উন্নয়ন কাজটি করে আসছেন। সড়কটির কাজ সুষ্ঠুভাবে করার পাশাপাশি বর্ষার আগেই সড়ক উন্নয়ন
কাজটি শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
ঠিকাদার আলেয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার প্রতিনিধি সাকের হোসেন সাগর সাংবাদিকদের বলেন, নানাবিধ সমস্যায় সড়কটির কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কাজে কোনোরকম অনিয়ম হচ্ছে না। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই কাজটি দ্রত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন বলেন, এই সড়ক উন্নয়ন কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে সড়ক উন্নয়ন কাজটি পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এলজিইডি’র সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।