পত্রিকায় একজন মন্ত্রীর মন্তব্য এসেছে, ‘রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত করেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা’। কারও না কারও পক্ষ থেকে মাঝে মাঝেই এমন রাজনীতিক কিংবা অরাজনীতিক মনোহর মন্তব্য করা হয়ে যায় এবং গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে সেটাকে সম্প্রচার করতেও কোনওরূপ কালক্ষেপণ করা হয় না।
কখনও এসব মন্তব্য নিয়ে কেউ কীছু বলেন অথবা বলেন না এবং জাতির কর্ণকোহরে এসব মন্তব্য কোনও দিনই প্রবিষ্ট হয় না, অন্তত অবস্থাগতিকে তা-ই মনে হয়। কারণ সাধারণ মানুষজন এসব নিয়ে কোনও মাথা ব্যথায় ভোগেন না, বরং তারা নির্বিকার থাকেন।
কথা হলো, আলোচ্য মন্তব্যটিতে রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাজনীতিক নেতাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা ভালো কাজ করেন নি। দোষারোপ করা হচ্ছে এই জন্যে যে, সমাজে রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা নৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয়। বক্তার বক্তব্যের নিহিতার্থতায় এই প্রত্যয়টি উত্তমরূপে প্রতিপন্ন হচ্ছে এবং এরকম একটি সমাজমানসতা দেশে বিরাজ করছে, সেটাও অস্বীকার করা যায় না।
একাত্তরের যুদ্ধোত্তর স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে এসে এখনও দোষারোপ করা হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে এই দোষারোপ কোনওদিনই থামবে না। কিন্তু বিদগ্ধমহল মনে করেন, সমাজ-রাজনীতি নিয়ন্ত্রকদের পক্ষ থেকে দোষারোপসঞ্জাত পরবর্তী কোনও কঠোর কর্তব্য পালন থেকে অবশ্যই সর্বাবস্থায় দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা প্রতিপালিত হবে নির্বিঘেœ। ত্রিশ লক্ষ স্বজনের মৃত্যুর প্রতিশোধ কেবল দোষারোপ করেই তাঁরা ভুলে যাবেন। এইটুকু রাজনীতিই তাঁদের একমাত্র সম্বল, পুনর্বাসনকে নির্বাসনে রূপান্তরের জন্য কোনও রাজনীতিক কার্যক্রম গ্রহণে সকল সময়েই তাঁরা পিছ পা থাকবেন, অতীতে যেমন থেকেছেন। সংস্কারবাদী প্রতিক্রিয়াশীলতা হলো তাঁদের রাজনীতিক আদর্শ। তাই প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিষ্ঠা তাঁদের কাছে দোষারোপের বিষয় হলেও উচ্ছেদের বিষয় মোটেই নয়, কোনও দিনই ছিল না। এইসব বিবেচনায় নিয়ে শেষে বলতেই হয় যে, উচ্ছেদের প্রত্যয়ে উজ্জীবিত না হতে পারলে দোষারোপ করার রাজনীতি থেকে বিরত থাকা উচিত।