একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খ-াংশ তোলে দিচ্ছি, অবশ্যই পাঠকের বিবেচনার জন্যে। সংঘটিত এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিেিত বলা হয়েছে, ‘কলেজ থেকে শিক্ষার্থীকে অপহরণের মতো ফৌজদারি অপরাধে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ … বলেন, পুলিশের গাড়িতে ওই ছাত্রী ও তার ভাইকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। পারিবারিকভাবে ওই ছাত্রীর সঙ্গে এক ছেলের বিয়ে ঠিক হয়। পরে ওই ছাত্রী তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এ জন্য সেই ছেলে ওই ছাত্রীকে তুলে নিতে কলেজে আসে। এ ঘটনায় তাঁরা কী করতে পারেন ?’
দৈনিক প্রথম আলোর ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখের তৃতীয় পাতায় এমনটাই লেখা হয়েছে এবং সংবাদটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য, অনিরাপদ ছাত্রীরা’। এমন ঘটনা ঘটেছে যখন এই পত্রিকারই দ্বিতীয় পাতায় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের উপর নির্ভর করে সংবাদশিরোনাম করা হয়েছে ‘আ.লীগ ক্ষমতাকে জনগণের সেবার সুযোগ হিসাবে দেখে’। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ ২০২৩) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন এবং বিদগ্ধমহলের ধারণা এই যে, প্রধানমন্ত্রীর এই যথার্থ বক্তব্য উপরোক্ত ঘটনার দায়কে প্রকারান্তরে অস্বীকারই কেবল করে না বরং এইসব দুর্বৃত্তদের ছাত্রলীগের সদস্যমর্যাদাকে প্রত্যাখ্যান করে। অপরদিকে বিদগ্ধমহল যৎপরোনাস্তি হতাশা হন যে, এমতাবস্থায় এইসব দুর্বৃত্ত তাদের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে এবং দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, নির্যাতনের চাপ প্রশমিত হচ্ছে না।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জনগণের বিরুদ্ধে রাজনীতিক ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা কাঠামোগত অত্যাচার, সহিংসতাও নির্যাতনকে অস্বীকার করা যায় নাÑ ব্যাপকতার পরিসরটাও অবশ্যই বৃহৎ। সেটা প্রতিপন্ন হয় জনবিরোধী আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিকতার সঙ্গে এমনকি যৌন নির্যাতন এবং যখন একটু ভাবলেই বোধোদয় হয় যে শ্রমিক শোষণ, মানবেতর জীবন, দুর্নীতি, বেকারত্ব, অর্থপাচার, মাদকব্যবসা, আত্মসাৎ, ভোট চুরি এমনি আরও কতো জীবনবিদ্বেষী সামাজিক-রাজনীতিক অনুষঙ্গ নিয়ে মানুষ এই দেশে প্রতিষ্ঠিত পুুঁজিবাদের পতাকাতলে বসবাস করছে। এই সমস্যার অবসান অবশ্যই চাই। সমস্যা নিরসনের নিশ্চিত চাবি কাঠি যাঁদের হাতে তাঁদেরকে অবশ্য আপাতত জনবিচ্ছিন্ন, আইনের ঘেরাটোপের ছত্রছায়ায় রাজনীতিক প্রতিরোধের মুখে স্থবির করে রাখা হয়েছে, ক্ষমতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অপারগ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান তো চাই। সেটা অবশ্য সময়ের ব্যাপার এবং সময় এগিয়ে আসছে।
একটি মেয়েটিকে তোলে নিয়ে যেতে অভিযানে বেরিয়েছিল যারা তারা মেয়েটির ভাইকে পিটিয়েছে এবং পুলিশ মেয়েটিকে ও তার ভাইকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন, কিন্তু যারা মেয়েটিকে তুলে নিতে এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সর্বান্তকরণে নিশ্চেষ্ট থেকেছেন। নির্যাতনের মচ্ছব চালানোর জন্যে দুর্বৃত্তরা যেন ছিল তেমনই রইলা, সুযোগের অপেক্ষায়। আবার তারা তৎপর হবে। নির্যাতিতদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবে না। এটাও অস্বীকারের কোনও জো নেই।
এই ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে আর একটি ঘটনার বাস্তবতাকে পরখ করে দেখুন। গত বছরের আগস্ট মাসে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার ঘটনা। ঘটনার ভিডিও চিত্র প্রকাশিত হলে পত্রিকা (প্রথম আলো ; ২৪ মার্চ ২০২৩) শিরোনাম করেছে, ‘থানায় যুবককে তুলে এনে পেটালেন স্বর্ণপাচারকারী’। এই যুবকের অপরাধ, সে যে-স্বর্ণ পাচার করে নিয়ে এসেছিল সেটা স্বর্ণপাচারকারীর নির্দেশ মতো যথাস্থানে পৌঁছে দেয় নি। কোনও পুলিশ কর্মকর্তা স্বর্ণ গাপ করা এই যুবককে স্বর্ণপাচারকারীর নির্দেশ মতো থানায় তুলে এনে তাকে পেটানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।
পত্রিকায় (দৈনিক প্রথম আলো : ২৪ মার্চ ২০২৩) লেখা হয়েছে, ‘ভিডিওতে দেখা যায় পরিদর্শকের (তদন্ত) চেয়ারে বসা ব্যক্তি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নন, তিনি স্বর্ণপাচারকারী একটি চক্রের নেতা। … দুবাই থেকে অবৈধভাবে দেশে সোনা পাঠান তিনি। পুলিশ সদস্যটি হলেন ওই থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) …।’ তাই প্রশ্ন থেকেই যায় আমাদের প্রশাসন এখন কী করছেন এবং কোথায় আছেন?