জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে ২০ কিলোমিটার এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ে অবস্থিত এই আউলিয়ার মাজার। তবে শাহ আরেফিনের বাংলাদেশ অংশের আস্তানা রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে। মূল আস্তানা ভারতের খাসিয়া পাহাড়ে হলেও সেই সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশ অংশেও ছিল উনার পদচারণা। আর সেখানেই এখন তার মাজার রয়েছে। জানা যায় হযরত শাহজালাল (রহ.) একদিন স্বপ্নযোগে রাসুলে পাক (দ.)-এর পক্ষ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের গৌড় রাজ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। তিনি এই স্বপ্নের কথা তাঁর স্বীয় মুর্শিদ হযরত সৈয়দ আহমদ কবির (রহ.)-এর কাছে বলার পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন- ‘যে মাটির রং ও গন্ধ এই মাটির সঙ্গে মিলবে সেখানেই তুমি অবস্থান নেবে এবং সেখান থেকেই তুমি ধর্ম প্রচার করবে।’ তিনি সিলেটে এসে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সাহচার্য পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসতে লাগলো এবং তিনি তাদের ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা স¤পর্কে জ্ঞানদান করেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে তিনি তার শিষ্যদের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচারের আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তাঁর ৩৬০ আউলিয়ার একজন হলেন হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোলপূর্ণিমার ১৩ দিন পর লাউড়েরগড়ের অদূরে পণাতীর্থ ধামে হয় বারুণী ¯œান ও মেলা। একই দিনে লাউড়েরগড়ে শুরু হয় শাহ আরেফিনের ওরস ও মেলা, চলে ৩ দিন। এই দুই মেলাকে ঘিরে এখানে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ঠিক কত বছর আগে শাহ আরেফিনের ওরস শুরু হয়েছিল সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এটুকু জানা যায়, এই ওরসের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। আগে এই ওরসের দিনে বিডিআর-বিএসএফের সমঝোতায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। দু’দেশের লোক জমায়েত হত তখন এই মিলনমলায়। কিন্তু একবার গ-গোলের পর থেকে এখন আর সীমান্ত খোলা হয় না।
শাহ আরেফিনের মূল আস্তানা ভারতের খাসিয়া পাহাড়ে বেশকিছু স্মৃতি চিহ্ন এখনো রয়েছে। ৭টি কূয়া, সুড়ঙ্গ পথ, পাথরের উপর নামাজ পড়ার পদচিহ্ন ইত্যাদি। শাহ আরেফিন যাকে স্থানীয় লোকেরা বলে ‘শারপিন’। প্রতি বছর ভক্তরা এখানে আসে তাদের মানত নিয়ে। লাখো মানুষের সমাগম ঘটে শাহ আরেফিন (র.) ওরস শরীফে। নিজ মনোবাসনা পূরণ ও সিদ্ধি লাভের আশায় শাহ আরোফিন (র.)-এর ওরসে যোগ দেন তার ভক্ত ও অনুসারীরা। শাহ আরেফিন (রহ.) জিন্দা পীর নামে পরিচিত।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।