গত শুক্রবারের (১৭ মার্চ ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল “বৌলাই নদী : খননের নামে কোটি কোটি টাকা ‘অপচয়’। ‘অপচয়’ শব্দটিকে উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে বন্দি করে দিয়ে এর বিশেষ তাৎপর্যকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সংবাদবিবরণীতে সে তাৎপর্যের নমুনা তোলে দিচ্ছি। লেখা হয়েছে, ‘চার বছর ধরে নদীতে ড্রেজার মেশিন দেখা যাচ্ছে’ … ‘মাঝে মাঝে খনন কাজ করে আবার বেশির ভাগ সময়ই মেশিন বন্ধ থাকে। এতে যে অংশ খনন করা হয় সেই অংশ আবার পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়।’ … ‘এখন … নদী থেকে মাটি তুলে সেই মাটি নদীর তীরেই রাখা হচ্ছে। এতে করে আবারও এই মাটি নদীতে পড়ে ভরাট হবে।’ … ‘দুই বছর মেয়াদে ওই খনন কাজ চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।’
নিশ্চয়ই নদী খননের নিয়ম আছে এবং সে-নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নদী শাসন বাস্তবায়ন করে তাদের দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। চীন সে-সব দেশের অন্যতম। উপরোক্ত সংবাদ বিবরণী প্রতিপন্ন করে যে, আমরাই কেবল সেই হতভাগ্য জাতি, যে-জাতি নদী শাসনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ না করে নদী শাসনকে সস্তায় টাকা কামানোর হাতিয়ার করে তোলেছি, পরিণত করেছি দুর্নীতির নিয়ামক শক্তিতে, উন্নয়নের শক্তি করে তোলতে পারিনি। পাউবো কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করে কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না। উপরওয়ালারা না চাইলে তাদের নিয়ন্ত্রিত এই প্রতিষ্ঠনগুলো কোনওকালেই দেশের উন্নয়নের জন্য কোনও কাজে হাত লাগাবেনা এবং বারবার দেশ ও জাতির সঙ্গে উন্নয়নের নামে প্রতারণা করে বিনাবিচারে রক্ষা পেয়ে যাবে এবং প্রকারান্তরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাবে। প্রকৃতপ্রস্তাবে তারা তো দেশের মানুষের ট্যাঁকের টাকায় বেতন খেয়ে নিজেদের উপরওয়ালাদের তাঁবেদারি করে। যাঁরা দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক তাঁদেরকে অবশ্যই পাল্টে যেতে হবে এবং টেকসই উন্নয়নের পদ্ধতিকে অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ নদীশাসনকে টেকসই করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবং করিবকর্মা পাউবোকে দিয়ে সে-কাজ কখনওই হবে না। কার্যকর ও টেকসই নদীশাসন নিশ্চিত করার জন্যে বর্তমানে অনুসৃত দুর্নীতিনির্ভর নদী খননের কার্যপদ্ধতি বদলে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ আর্থনীতিক ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।