মো. শাহজাহান মিয়া ::
দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মাগুরা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানালেও সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। এদিকে, সম্প্রতি নদী পারাপারে নতুন বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। নদীতে খেয়া নৌকা থাকলেও মাঝি নেই। মাঝি না থাকায় বাধ্য হয়ে যাত্রীরা নিজেই নৌকা বেয়ে এপার-ওপার হচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে খেয়া নৌকা ভেসে ভেসে ঘুরছে। নদীর দুই পারে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। নৌকাটি পশ্চিমপারের ঘাটে আছে। নৌকাতে কয়েকজন নারী ও শিশু যাত্রী উঠে বসে অপেক্ষায় আছেন পুরুষ কোনো যাত্রী এসে নৌকা বেয়ে ওপারে নিয়ে যাওয়ার আশায়। অনেকক্ষণ পর এ প্রতিবেদকসহ আরো ২ জন তরুণ এসে নৌকায় উঠলে তাদের মধ্যে যেন প্রাণ ফিরে আসে। এবার সমস্যা হলো যাদের উপর নারী যাত্রীরা এতো ভরসা করলেন, সেই পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে কেউই ভালোভাবে নৌকা বাইতে জানেন না। তার উপর নদীভর্তি কচুরিপানা। এতো কচুরিপানা মাড়িয়ে নৌকা বেয়ে পশ্চিমপার থেকে পূর্ব নেয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দায়িত্ব পড়েছে সেই পুরুষ যাত্রীদের ঘাড়ে। এর মধ্যে পূর্বপারের যাত্রীরা ঘাটে বসে অপেক্ষা করছেন কতক্ষণে এপারের নৌকা ওপারে যাবে। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট এলোপাতাড়িভাবে নৌকা বেয়ে ওপারে গিয়ে পৌঁছালো নৌকাটি।
এ সময় স্থানীয় যাত্রীদের মধ্যে অনেকে জানান, এ খেয়া নৌকাটি এলাকাবাসীর অর্থে বানানো হয়েছে। নৌকা চালানোর জন্য ২ জন মাঝি ছিল। তাদেরকে প্রতি মাসে গ্রামবাসী ২৫ হাজার টাকা দিতেন। এখন মাঝিরা ৪০ হাজার টাকা চায়। তাদের কথা মতো টাকা না দেয়ায় মাঝিরা চলে গেছেন। যে কারণে এ দুর্গতি চলছে।
জানাগেছে, নদীর পশ্চিমপারে রয়েছে শিবগঞ্জ বাজার এলাকা ও পূর্বপারে রয়েছে উলুকান্দি, কিশোরপুর ও খালিশাপাড়া গ্রাম। মধ্যস্থানে আছে মাগুরা নদী। নদীটি বেশি গভীর হওয়ায় যুগযুগ ধরে নৌকাযোগে এসব গ্রামের মানুষসহ আশপাশের নারী-পুরুষ, শিশু, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন শতশত মানুষ পারাপার হচ্ছেন। মাঝে মধ্যে নৌকা না থাকলে অথবা মাঝি না থাকলে বেড়ে যায় তাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি। রাত ১০টার পর তো নৌকাই থাকে না। কোন অবস্থাতেই এপারের মানুষ ওপারে যাতায়াত করতে পারেন না। এ অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন কবে হবে, কেউ জানেন না।
মাওলানা দবিরুল ইসলামসহ স্থানীয় অনেকে বলেন, এ মাগুরা নদীতে একটি সেতুর অভাবে আমরা এ অঞ্চলের মানুষ যুগযুগ ধরে পিছিয়ে আছি। ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়তে চায় না। জনস্বার্থে এখানে সেতু হওয়া অতীব জরুরী। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, সেতুর দাবিতে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি। এখন আমরা নিরাশ হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে জানতে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিন কল রিসিভ করেননি।