মো. শাহজাহান মিয়া ::
জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইচগেটগুলোর অবস্থান হচ্ছে, একটি জগন্নাথপুর পৌর শহরের আলখানা নদীরমুখ, আরেকটি উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের নলুয়ার হাওরের পশ্চিমপ্রান্ত ভুরাখালি গ্রাম এলাকার ক্লোজার ও অপরটি বেতাউকা গ্রাম এলাকার ক্লোজার।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রথমে এসব স্লুইচগেটের উপকারও পেয়েছেন মানুষ। হেমন্ত মৌসুমে এসব স্লুইচগেট বন্ধ থাকতো। বৈশাখ মৌসুমে নদ-নদীতে অকাল বন্যার পানি আসলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে চাপ দিতো। তখন স্লুইচগেট খোলে হাওরে থাকা খাল, বিল ও নদীতে কিছু পানি ছেড়ে দিলে হাওর শঙ্কামুক্ত হয়ে যেতো। তখন জমিতে অল্প পানি লেগে যেতো। পানিতে ধান কাটলেও কৃষকদের মনে আনন্দের কমতি ছিল না। সবার একটাই শান্তনা ছিল, পানিতে ধান কাটলেও হাওর তো রক্ষা হয়েছে। আমাদের কষ্টের ফসল তো গোলায় তুলতে পারছি। এখন সেই পুরনো দিনের চিত্র বদলে গেছে।
বিগত প্রায় একযুগ ধরে সেই স্লুইচগেটগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে হাওরে। গেটের পাকা অংশ থাকলেও ভেতরের লোহার কপাট নেই। কোনটাতে কয়েকটি কপাট থাকলেও অন্যগুলো নেই। কোনটাতে যে কপাট আছে, সেগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্লুইচগেটগুলো সচল না থাকায় এসব গেটের নিচে প্রতি বছর প্রকল্প দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন পিআইসি’র সদস্য জানান, এ ৩টি গেট অংশ বাঁধের জন্য প্রতি বছর সরকারের কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে। গেটগুলো সচল হলে অকাল বন্যার কবল থেকে হাওরগুলো অনেকটা শঙ্কামুক্ত থাকতো। সেই সাথে টাকাও সাশ্রয় হতো।
এদিকে, হাওরের ঝুঁকি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে এসব স্লুইচগেটগুলো মেরামত করে আবারো সচল করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন হাওরপারের কৃষক-জনতা।
কৃষক এনামুল হক, আছলম উদ্দিনসহ আরও অনেকে জানান, প্রতি বছর হাওরের আগাম বোরো ফসল রক্ষায় মাটির কাঁচা বাঁধ নির্মাণ হলেও ফসলহানির শঙ্কা যেন কৃষকদের পিছু ছাড়ে না। কখন যে নদীতে পানি এসে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যায় এই আশঙ্কা থাকতে হয়। গেটগুলো সচল হলে তো নদীর অতিরিক্ত পানি হাওরে ছেড়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসান গাজী বলেন, বিকল হওয়া স্ল্ইুচগেটগুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখেছেন। বরাদ্দ পেলে গেটগুলো মেরামত করা হবে।