একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়তে হবে’। এই কথা যখন তিনি বলছেন তখন বাংলাদেশ জিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে বদলে যাচ্ছেÑ গণমাধ্যমের প্রচারে এমনটাই প্রতিপন্ন হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মানসম্মত লেখাপড়ায় এগিয়ে নিতে হবে। নিজেকে জ্ঞাননির্ভর বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলতে হবে।’
এই এবংবিধ কথার বিরোধিতা করবেন না বিদগ্ধ কেউ এবং এই সম্পাদকীয় দপ্তরও করছে না বরং তাঁর পক্ষেই আছে, তাঁকে সমর্থন করছে নির্দ্বিধায়। কিন্তু তারপরও কথা থেকেই যাচ্ছেÑ কিন্তু থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান মুনাফানির্ভর ও দুর্নীতিবাজ সমাজ সংস্থিতিকে পাল্টে না দিয়ে বিবেকবান মানুষ তৈরি করা কীছুতেই সম্ভব নয়। কানার মনে মনে জানার মতো অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজ-সংসারের কথা সমাজের সকলেই জানেন, এখানে কোনও মানুষের মনে বিবেক বলে কীছু পয়দা হওয়ার পরিসর কিংবা সামাজিক ক্ষেত্র নেই। যেখানে বেঁচে থাকার জন্যে সৎ, শুদ্ধ, সোজা ও পবিত্র কোনও পথ খোলা রাখা হয়নি অর্থাৎ যেখানে দুর্নীতি অবলম্বন না করে কেউ বেঁচে থাকতে পারে না, সেখানে বিবেকবান কোনও মানুষ তৈরি হতে পাে রনা। ব্যতিক্রম বাদে বর্তমান সমাজ পরিসরে এটাই মানুষের অনিবার্য পরিণতি।
কয়েকদিন আগে দোয়ারাবাজারের এক গ্রামে ১১ বছরের একটি মেয়েকে একজন ২০ ও আর একজন ২২ বছরের তরুণ মিলে ধর্ষণ করেছে, গ্রামের মাতব্বররা পক্ষ নিয়েছে ধর্ষকদের এবং তারা থানায় অভিযোগ করতে বিরত রেখেছে ভুক্তভোগীর অভিভাবকদের, থানা অভিযোগ না পাওয়ার অজুহাতে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সমাজের কেউ ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কুটোটি পর্যন্ত নাড়ছেনা, ধর্ষকরা দিব্যি সমাজে সম্মানিত সদস্য হিসেবে চলাফেরা করছে। এমন বিবেকবিবর্জিত সমাজে কী করে বিবেকবান শিক্ষার্থী তৈরি হবে কীছুতেই বোধগম্য নয়।
বিদগ্ধজনেরা মনে করেন, এই সমাজটাকে পাল্টে না দিলে কোনও বিবেকবান নাগরিক তৈরি হবে না। আর এই পাল্টানোর কথা বলাটাও বর্তমান সামাজিক-রাজনীতিক পরিস্থিতির পরিসরে মূর্তনির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে সত্যিকার অর্থেই অন্যরকম উটকো বিপদের ফাঁদে পা ফেলার সামিল। জেনে বোঝে কারও পক্ষে সেট না করাই উত্তম।