‘ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ’ নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘গুরুত্বপূর্ণ এক হাজার মিটার জায়গা ফাঁঁকা \ অরক্ষিত নলুয়ার হাওর’। এমন সংবাদ পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হলে অবাক হওয়ার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। কারণ অভিজ্ঞমহলের ধারণা এই যে, এমনটা না হলেই বরং অবাক হওয়ার মতো কারণের উদ্ভব ঘটে। মনে হচ্ছে, প্রসঙ্গটি একটু খোলাসা করে পরিবেশন করা প্রয়োজন।
বিদগ্ধ কেউ কেউ মনে করেন, হাওরে ফসলরক্ষার জন্য বাঁধ দেওয়া হয় না, আসলে বাঁধ দেওয়া হয় হাওরের প্রকৃতি-প্রতিবেশ ও বিশেষ করে জৈবপ্রতিবেশকে বিনাশ করার ষড়যন্ত্রসঞ্জাত বৈদেশিক কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য। এ জন্য অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ দিয়ে দিয়ে একদিকে হাওরের বিল-ঝিল, নদী-নালা, খাল-বাঁওরের পানিপ্রবাহ রুদ্ধ করা ও অন্যদিকে নদী-বিল-ঝিলের ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাসমস্যাকে প্রকট করে তোলা হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নদী হারাচ্ছে নাব্যতা, অপরদিকে মিঠা পানির জীববৈচিত্র্য বিনাশে নিপতিত হয়ে মাছ-গাছের বিলুপ্তায়নের গতি তীব্র ও অপ্রতিহত করে তোলছে ক্রমান্বয়েÑ দিনের পর দিন।
হাওররক্ষা বাঁধ হাওরের স্বার্থে নয় বরং লুটেরাদের বরাদ্দ আত্মসাতের স্বার্থে প্রণিত ও বাস্তবায়িত হয়, কার্যত হাওররক্ষা বলে কোনও কীছু নেই, হাওররক্ষা বাঁধ নিয়ে কার্যকর সামগ্রিক কার্যক্রম অন্তত তাই প্রতিপন্ন করে। এই জন্যে অপরিকল্পিত, অপ্রয়োজনীয় বাঁধের ছাড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয় পাউবো প্রণীত হাওররক্ষা বাঁধের তালিকায় এবং অপরদিকে অভিযোগ-আপত্তি সত্ত্বেও বারবার চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ লুটেরাদেরকে নিয়েই পিআইসি গঠন করা হয়। প্রকৃতপ্রস্তাবে হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণ কর্মসূচি সামগ্রিকভাবে হাওরের কৃষকদের নয় হাওরাঞ্চলের কৃষিবিরোধী লুটেরাদের স্বার্থকেই প্রতিপন্ন করে। এই বাস্তবতা বলে দেয় যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে বাঁধ নয় বরং পরিকল্পিত উপায়ে কার্যকরভাবে নদী-নালা খনন, বিল-ঝিলের অতীতের জলধারণক্ষমতা ফিরিয়ে আনার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়াই এখন সময়ের একমাত্র দাবি। নদী-নালা, খাল-বিল খনন ও পুনরুদ্ধারের কাজ পুরোদমে শুরু করে ‘হাওরে বাঁধ দিয়ে হাওররক্ষার নীতি’ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসাই বর্তমানে বন্যাসঞ্জাত হাওরের ফসলডুবির সমস্যা সমাধানের প্রকৃত পন্থা।