হোসাইন আহমদ ::
নাইন্দা নদীর তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শতবর্ষী জনপদ সদরপুর গ্রাম। অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নাইন্দা নদীর উত্তর-দক্ষিণ পারে বসবাসরত প্রায় অর্ধশত পরিবারের। ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিলীন হয়ে যেতে পারে অনেক পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের নাইন্দা নদীর উত্তর-দক্ষিণ অংশের তীরবর্তী সদরপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার নদী ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে গ্রামের ৭টি পরিবারকে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক বসতভিটা। একাধিক বসতভিটেতেও ধরেছে বড়-বড় ফাটল। এগুলো যেকোনো ধ্বসে যেতে পারে।
এদিকে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু সেচ প্রকল্পের নামে ভাঙন এলাকা থেকে দুটি কল দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে অবিরত। সবমিলিয়ে ভাঙন দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হতে হচ্ছে এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোকে।
সদরপুর গ্রামের আলমগীর মিয়া জানান, যেভাবে নদী ভাঙন হচ্ছে এতে আমাদের এখানে অবস্থান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বসতবাড়ি হয়তো কিছুদিনের মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে। ঘর তলিয়ে গেলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমার। আমি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। জায়গা কেনার সামর্থ্যও নেই। কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছিনা। ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি কখন সবকিছু নদীতে তলিয়ে যায়! আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম জানান, আমরা অসহায় অবস্থায় এখানে আছি। ছেলে সন্তান নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে আমাদের। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। এক মেয়ে ও পাঁচ ছেলে নিয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। আমাদের থাকার মত কোনো জায়গা নেই এখান ছাড়া। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাদেরকে যেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে গত তিন বছর ধরে প্রস্তাবনা দিচ্ছি সরকারের কাছে। অর্থ বরাদ্দ না আসায় আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে সরকার টাকা বরাদ্দ দিলে আমরা কাজ করতে পারব। আমাদের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তাদের নজরে বিষয়টি আছে। নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমেদ বলেন, নাইন্দা নদী ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা পরিষদের নজরে আছে। এই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে একটি আবেদনও পাঠিয়েছি। আশাকরি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।