এস ডি সুব্রত
দোল পূর্ণিমার অন্য নাম ‘দোলযাত্রা’। একটি সনাতন হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত ‘হোলি উৎসব’টির সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসবটি স¤পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম ‘বসন্ত উৎসব’। ফালগুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ভগবান রাধা-কৃষ্ণ এই দিন পূজিত হন। বাঙালি হিন্দুদের দোলযাত্রাটি রাধা-কৃষ্ণকে ঘিরেই, তাকে দোলায় বসিয়ে ওই দিনে পূজা-পার্বণ করা হয়।
দোল পূর্ণিমার মূল আকর্ষণ আবির। এই দিনটি আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেয়ার দিন। দোলের পরের দিন ‘হোলি উৎসব’। হোলি হল রঙের উৎসব। দোল পূর্ণিমা বাংলার বসন্ত উৎসব। প্রতি বছর বাঙালিরা এই দিনটিতে রঙ খেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে।
দোলযাত্রা যেন বসন্তের আহ্বান। এই দিনে বাতাসে যেন একটাই সুর বয়ে চলে “রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে”।
কোথাও এই দোল পূর্ণিমাকে দোল যাত্রা বলে। আবার ফালগুনী পূর্ণিমাকেও দোল পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা অনেক পৌরাণিক ঘটনা। এই তিথিতে বৃন্দাবনে আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ, রাধা এবং তার গোপীগণের সঙ্গে হোলি খেলেছিলেন আর সেই ঘটনা থেকে উৎপত্তি হয় দোল খেলা।
দোল শুধুমাত্র বাঙালিদের উৎসব না, সারা বিশ্বজুড়ে দোল পূর্ণিমা পালন হয় শুধু আলাদা নামে। সারা বিশ্বজুড়ে এই উৎসবটি “হোলি” নামে পরিচিত।
দোল সাধারণত পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয়। দোল এবং হোলি দুটি আলাদা অর্থ হলেও দুটি একই জিনিস। এর পিছনে কারণও এক। হোলি কথাটি “হোলিকা” থেকে সৃষ্ট হয়েছে। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ এবং দিতির ছেলে হিরণ্যকশিপুর বোন। আর হিরণ্যকশিপুরের ছেলে ছিলেন প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ অসুরবংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও ছিলেন প্রভু বিষ্ণুর ভক্ত। এর জন্য তার পিতা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ সে প্রভু বিষ্ণুকে তার বাবার উপর স্থান দিয়েছিলেন। তাই তার পিতা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের ছেলেকে হত্যা করবেন। প্রহ্লাদ ধার্মিক ছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা সহজ ছিল না। কোনোভাবেই তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তখন হিরণ্যকশিপু তার ছেলেকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে হোলিকা আগুনে কোন দিন ক্ষতি হবে না এই বর পেয়েছিল। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হোলিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেবে। কিন্তু হোলিকা বর পাওয়া সত্ত্বেও সেদিন শেষ রক্ষা হয়নি। প্রহ্লাদ তো বিষ্ণুর আশীর্বাদে বেঁচে যান। কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যায় হোলিকা। সে তার বরের অপব্যবহার করায় আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সময় তার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং সে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই দিনটি থেকে পালন করা হয় হোলি বা দোল উৎসব।
অনেকে আবার হোলিকার উদ্দেশ্যে মাটির পুতুল বানিয়ে ওই শুকনো ডালপালা ঘরে রেখে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিনটি মানুষ নানাভাবে পালন করে থাকে। এবং পরের দিন হয় দোল উৎসব। আবার অন্য তথ্যমতে বসন্ত পূর্ণিমার দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কেশি নামে একজন অসুরকে বধ করেন। কেশি একজন অত্যাচারী এবং নিষ্ঠুর অসুর ছিলেন। এর জন্য এই অত্যাচারী অসুর দমন হওয়ার জন্য এবং অন্যায় শক্তি ধ্বংস হওয়ার জন্য আনন্দ উৎসবে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে। বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করতেন দোল পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধাকে আবির মাখিয়ে রঙ খেলায় মেতে ছিলেন এবং সঙ্গে ছিলেন তাদের গোপীগণ। তারপর থেকে দোলের দিন আবির নিয়ে রঙ খেলার সূচনা হয়।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।