1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রকল্প দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড : অরক্ষিত সাত হাওর

  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩

জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৭টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে অরক্ষিত রয়েছে উপজেলার ৭টি হাওরের প্রায় দুই হাজার হেক্টর বোরোজমির ফসল। হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে- নতুন করে হাওরে আর বাঁধ দেয়ার সুযোগ নেই। অথচ গোবরহরি হাওর ও কইয়ারবন হাওরে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাঁধ মেরামতের জন্য ২টি হাওরে ৩টি পিআইসি দেয়া হয়েছিল। অপরদিকে, উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের কাশীপুর গ্রামের পাশে উদগল বিল হাওর উপ প্রকল্পের বর্ধিতাংশে মাত্র একশ হেক্টর জমির ফসলরক্ষায় প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে।
রবিবার (৫ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর সংলগ্ন বাহাড়া ইউনিয়নের গোবরহরি হাওর, পুটিয়ার হাওর, কইয়ারবন হাওর, শাল্লা ইউনিয়নের শ্রীহাইলের জোয়ারিয়া, চব্বিশা-মনুয়া গ্রামের ছাগল নাইয়া, ভাটির হাওর ও খলারবন হাওরে কোনো পিআইসি দেয়া হয়নি।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হলেও তারা কোনো প্রকল্প দেয়নি এসব হাওরে। ফলে অরক্ষিত থেকে গেল উপজেলার ছোট ছোট ৭টি হাওরের প্রায় দুই হাজার হেক্টর বোরোজমির ফসল। গত বছরও (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) ওই হাওরগুলোতে বাঁধ না দেয়ায় নদীরপাড় উপচে কৃষকের ফসল তলিয়ে যায়।
শাল্লা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য সিরাজ মিয়া বলেন, ছাগল নাইয়া হাওর, ভাটির হাওর ও খলারবন হাওরে প্রায় এক হাজার হেক্টর বোরোজমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। গত বছরও বাঁধ না দেয়ায় চব্বিশা, খল্লী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৯৭টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। সরকার কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য এতো বিপুল বরাদ্দ দেয়ার পরও কেনো উপজেলার ছোট ছোট হাওরের দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রি-ওয়ার্কের সময় স্থানীয় কৃষকদের মতামতকে উপেক্ষা করে এসব হাওরগুলোকে বাদ দিয়েছেন। গোবরহরি, পুটিয়া ও কইয়ারবন হাওরে উপজেলার রঘুনাথপুর, কান্দখলা, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও, ডুমরা গ্রামের শতশত কৃষকের প্রায় হাজারো হেক্টর বোরোজমির ফসল রয়েছে। গত বছরও ফসলরক্ষা বাঁধ না দেয়ায় এসব হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষকের সারা বছরের কঠোর পরিশ্রমের একমাত্র ফসল প্রতি বছরই থাকে অরক্ষিত। এসব হাওরগুলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের আওতায় আনার দাবি হাওর আন্দোলন সংগঠনের এই নেতার।
ডুমরা গ্রামের কৃষক বাদল চন্দ্র দাশ বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গোবরহরি ও কইয়ারবন্দ হাওরে পিআইসি দেওয়া হয়েছিল। এসব হাওরগুলোতে পূর্বেই তো বাঁধ দেওয়া ছিল। তবে এখন বাদ যাবে কেনো? আর হবিবপুর ইউনিয়নের কাশীপুর গ্রামে মাত্র একশ হেক্টর বোরোজমি রক্ষা করতে প্রতি বছরই কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়। অথচ ওই হাওরে আষাঢ় মাসেও পানি উঠে না। এবছর ওই হাওরে আমন ধানও রোপণ করা হয়েছে। কিছু মানুষকে খুশি করার জন্যই প্রতি বছর কোটি টাকার প্রকল্প দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলে জানান ওই কৃষক।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি পাউবো’র উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, কইয়ারবন, পুটিয়া, জোয়ারিয়া, মনুয়া এগুলোতে আগেও আমরা বাঁধ দেই নাই। এখনও দিচ্ছি না। কারণ, প্রত্যেকটা ধান বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না। কিছু কিছু জায়গা এলাইনমেন্টের বাইরে থাকবে। এসব জায়গায় বাঁধ দিতে গেলে বাঁধের খরচ ও উৎপাদনের দিক চিন্তা করলে সরকারের লস হবে। অন্যান্য বাঁধও হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ -২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন, নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। নতুন হাওরগুলো নিতে হলে স্টাডি করতে হয়, পরিবেশ এই-সেই অনেক ব্যাপার আছে। ছোটছোট হাওরগুলোর ক্ষেত্রে কর্মসূচি, এলজিইডি’র কাজ দিয়ে করতে পারবে বলে পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, গত বছর যেগুলো দেওয়া হয়েছে, এবছরও সেগুলো দেওয়া হয়েছে। বরং গত বছরের চেয়ে এবছর প্রকল্প বেড়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে হাওরে ফসলরক্ষা ডুবন্ত বাঁধের ৮৭ কিঃমিঃ ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য ১৩৮টি পিআইসির বরাদ্দ ছিল ২৪ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১০৬ কি.মি. বাঁধ সংস্কারে ১৯৭টি পিআইসির বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com