স্টাফ রিপোর্টার ::
ছাতকে টিকটক ভিডিও ধারণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। গত বুধবার (১ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছাতকের সুরমা ব্রিজের গোলচত্বর এলাকায় ভাসখলা ও মুক্তিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহত যুবকের নাম ছয়ফুল আলম (৩৫)। তিনি ছাতক উপজেলার মুক্তিরগাঁও গ্রামের মৃত চমক আলীর ছেলে। তবে আহত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ছাতকের সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সুরমা ব্রিজে দুই তরুণী ঘুরতে যান। এ সময় দুই তরুণী ব্রিজের ওপর টিকটক ভিডিও ধারণ করতে গেলে ভাসখলা গ্রামের কয়েকজন তাতে বাধা দেন। এর মধ্যে মুক্তিরগাঁও গ্রামের কয়েকজন তরুণও সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে দুই গ্রামের তরুণেরা বাগ্বিত-া ও হাতাহাতিতে জড়ান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সুরমা ব্রিজের গোলচত্বর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত ছয়ফুল আলমকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় সংঘর্ষকারীরা গোলচত্বর এলাকায় বেশ কটি দোকানে ভাঙচুর করেছে। একটি পিকআপ ভ্যান, একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়েছে। ছাতক থানার পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়। রাত ১১টার দিকে ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১০১টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের ১৪টি শেল নিক্ষেপ করে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মাঈনুল জাকির বলেন, দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক থানার সহযোগিতা নিতে হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। দুই গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছাতক সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক বলেন, এ ঘটনায় ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। কোনো পক্ষই থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না করায় আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হল- বাঁশখলা গ্রামের আহাদ মিয়া পক্ষের শাকিব মাহমুদ (২৫), আলী কাউছার (২১), মোশারফ হোসেন হেলাল (১৮), ছায়েদ আহমদ লিমন (১৮), মো. রাসেল মিয়া (২৪), মো. সালমান (২৫), চেরাগ আলী (৫৭), রহিম আলী (৫৮), মোতাছির আলী (৬৮), আহাদ আলী (৬৩), সুরত আলী (৭০), দুলন (৩৮), নজির আলী (৭০), মো. মামুন মিয়া (১৯), যোবায়েল আহম্মদ ইমন (২০), মো. রাজিব মিয়া (২২), আব্দুস শহিদ (৩৬), আবু বক্কর (২০), মো. মিলন মিয়া (৩২)।