স্টাফ রিপোর্টার ::
২০২২-২৩ অর্থ বছরে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী’র মাধ্যমে স্মারকলিপিটি প্রেরণ করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ২০২২ সনের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়ায় প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে বিলম্ব হয়। ফলে কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয়। আমরা সরেজমিন ঘুরে দেখেছি এখনো অর্ধেক কাজ বাকি। এবারও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো বাঁধই স¤পন্ন হয়নি। প্রকল্পের সময় বর্ধিত করা হলেও, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারা এবং কাজ শেষ করতে না পারায় নির্মাণকাজও টেকসই হবেনা। যার ফলে বাঁধগুলো ঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হাওরে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত কৃষকরা কার্যকরী বাঁধের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকৃত কৃষক দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কৃষক নয় এমন ব্যক্তিও নানাভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলতি বছর বন্যার দোহাই দিয়ে বাঁধের বরাদ্দ, প্রকল্পের পরিমাণ, পিআইসি গঠনে অনিয়ম, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, অক্ষত ও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত
প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ দিয়ে সরকারি টাকা অপচয়ের মহোৎসব চলছে।
স্মারকলিপিতে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উল্লেখ করে, আমার ঘুরে দেখেছি এখনো জেলার ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারে মাটি ফেলা হয়নি। দুর্বাঘাস লাগানো ও কমপেকশন বাকি রয়ে গেছে। আমাদের সংগঠনের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ১২ উপজেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক পিআইসির কাজ পরিদর্শন করেছেন। কিছু কিছু বাঁধের কাজের গতি সন্তোষজনক হলেও বেশিরভাগ বাঁধের কাজের গতি মন্থর। বাঁধের কাজে নীতিমালা মানা হচ্ছেনা কোথাও। বাঁধের প্রকল্প এলাকার সাইনবোর্ডের সাথে তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
এ সময় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাওর ফসল রক্ষা ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ঠেকাতে ১০টি দাবি পেশ করেন। এগুলো হল- হাওরের নদ নদী খাল বিল খননের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। খননের চলমান প্রকল্পগুলো কঠোর নজরদারিতে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনিটরিং বাড়াতে হবে। প্রকল্প জলমহাল বাধ্যতামূলক খননের আইন থাকলেও ইজারাদাররা তা মানেন না। তাদেরকে মানাতে বাধ্য করতে হবে। এতে হাওরে আগাম বন্যার পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। হাওর এলাকায় বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খনন কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে হবে। হাওরে অপ্রয়োজনীয় ও হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ যথাযথভাবে মানতে হবে, অকৃষকদের পিআইসিতে যুক্ত করা যাবেনা এবং সবার সামনে গণশুনানী করে গণশুনানী স্থলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ঘোষণা করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বাঁধের কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত এবং নীতিমালাবিরোধী কাজ অনুমোদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম ও কৃষক পর্যায়ের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওরের বাঁধের কাজে প্রকৃত কৃষকদের যুক্ত করে যথাসময়ে অর্থ ছাড় দিতে হবে। প্রকল্পের প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্কে দুর্নীতি থামাতে হবে। দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্কে চরম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের অর্থ অপচয় ও লোপাট হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী, সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাধারণ স¤পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক নির্মল ভট্টাচার্য, বাঁধ বিষয়ক স¤পাদক রাজু আহমেদ, প্রচার স¤পাদক আনোয়ারুল হক, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জের সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল, সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল হক মিলন, সাংগঠনিক স¤পাদক শহীদনূর আহমেদ, সদস্য চন্দন রায়, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সভাপতি স্বপন দাস প্রমুখ।