সংবাদটির শিরোনাম, ‘মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় লিবিয়ায় জগন্নাথপুরের যুবকের মৃত্যু’। সংবাদবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সালের ২১ মে চার লাখ টাকা দিয়ে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারগাঁও গ্রামের দালাল শাহীনের মাধ্যমে লিবিয়া যায় সাহাদ আলী। সেখানে পরিচয় হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দালাল সাদ্দামের সঙ্গে। ওই বছরের নভেম্বর মাসে সাদ্দাম তাকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেন। তখন মাফিয়া চক্র তার পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। […] তাদের কথামতো টাকা দিতে না পেরে নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।’
দালালের হাত ধরে বিদেশে গিয়ে এইভাবে মৃত্যুর ঘটনা এই দেশের রোজগার প্রত্যাশী মানুষের জন্যে নতুন কোনও ঘটনা নয়, বরং গতানুগতিক। ঘটনার প্রকার-প্রকৃতি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, লোকেরা অনেকটা জেনে বুঝেই, যা থাকে কপালের উপর নির্ভর করে দালালদের বিশ^াস করে বিদেশযাত্রার ফাঁদে পা দেয় এবং দালালরাও প্রচলিত বিচারহীনতার সংস্কৃতির চক্করে তাদের ‘কোনও বিচার হবে না’র অবকাশে নির্বিচারে মানব-পাচারের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, বিলকুল জেনে বোঝেই। যাঁরা অপরাধ করছেন ও যাঁরা অপরাধ দমনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত, এই উভয়পক্ষই এই অপরাধের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্তÑ এই সত্যিটি অস্বীকার করার কোনও জো নেই।
এর প্রতিকার-প্রতিহতের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত লেখালেখি হয়েছে ও হচ্ছে। বোধ করি, প্রতিকারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথাযথ ও ফলপ্রসূ নীতিনির্ধারণের জন্য সে-সব লেখালেখিতে উদ্ভাসিত করণীয়গুলোই যথেষ্ট। সম্পাদকীয়তে যা-ই বলা হোক না কেন সেটা চর্বিতচর্বণ ভিন্ন আলাদা কীছুই হবে না। তবু বলতেই হচ্ছেÑ এর প্রতিকার চাই, রাষ্ট্রবহির্ভূত মানবপাচার রহিত হোক। দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়া ঠেকানোর যথাযথ ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আর এই অবৈধ মানবপাচার যদি ঠেকানো না যায়, সেটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলেই পর্যবসিত হবে। মোট কথা রাষ্ট্রকে মানবপাচারে সক্রিয় দালালচক্রকে দমন ও নির্মূল করতে দালালদের বিচারের সম্মুখিন করতেই হবে।