স্টাফ রিপোর্টার ::
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ছাতক-সিলেট রেলপথ সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সাথে চালু করা হবে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, জনবল সংকট নিরসনের লক্ষে সম্প্রতি ৫৫৭ জন সহকারী স্টেশনমাস্টার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং শিগগিরই এ পদে আরও উল্লেখযোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে অন্যান্য শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন সেকশনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। কাজ স¤পন্ন হলে ধাপে ধাপে স্টেশনগুলো চালু ও নতুন নতুন ট্রেনের মাধ্যমে রেলওয়ের যাত্রীসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, অচল স্টেশনগুলো সচল করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে চেয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে সর্বশেষ গত বছরের ১১ নভেম্বর রেলওয়ে সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ ডিসেম্বর ইতিবাচক মতামত দেয় রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। ফিরতি চিঠিতে প্রধান প্রকৌশলীকে বন্ধ থাকা ছাতক-সিলেট রেলপথের কয়েকটি স্টেশনসহ ৪৮টি স্টেশন গুরুত্ব বিবেচনায় তিন ধাপে চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে ২১টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৯টি এবং তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপে আটটি স্টেশন চালু করা হবে।
অচল হয়ে পড়ে থাকা আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার সেকশনের বন্ধ আটটি স্টেশন হলো- লংলা, টিলাগাঁও, ইটাখোলা, লস্করপুর, ভাটেরাবাজার, আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার। এছাড়া অন্যান্য অচল রেলস্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনের বাড়বকু-, মিরসরাই, মহুরীগঞ্জ, শর্শদী, আলীশহর, নাওটি, ময়নামতি, গঙ্গাসাগর, বারৈয়াঢালা, মস্তাননগর ও কালীদহ। এ সেকশনে সবচেয়ে বেশি ১১টি স্টেশন বন্ধ করা হয়। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনেও বন্ধ করে দেওয়া হয় আটটি স্টেশন। এছাড়া আখাউড়া-ঢাকা সেকশনে চারটি, ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের চারটি, লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনে তিনটি, ময়মনসিংহ-ঝারিয়াঝাঞ্জাইল-মোহনগঞ্জ সেকশনে দুটি, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সেকশনে দুটি, লাকসাম-নোয়াখালী সেকশনে দুটি, জামালপুর টাউন জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতুর (পূর্ব) তিনটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ স্টেশনগুলোর মধ্যে লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনের মধুরোড স্টেশন (একমাত্র ‘ডি’ ক্যাটাগরির স্টেশন) ও আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার সেকশনের ছাতকবাজার স্টেশন কখন বন্ধ করা হয়েছিল, সে স¤পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, অন্যান্য স্টেশনের মধ্যে ২০০১ সালে একটি, ২০০৩ সালে একটি, ২০০৮ সালে একটি, ২০০৯ সালে পাঁচটি, ২০১০ সালে ছয়টি, ২০১১ সালে পাঁচটি, ২০১৩ সালে ছয়টি, ২০১৪ সালে চারটি, ২০১৭ সালে একটি, ২০১৮ সালে দুটি, ২০১৯ সালে দুটি, ২০২০ সালে তিনটি, ২০২১ সালে দুটি এবং ২০২২ সালে সাতটি বন্ধ করা হয়।
রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নতুন জনবল লোকবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলপথের একাধিক প্রকল্পের কাজ শেষপর্যায়ে চলে আসায় বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেগুলো চালু হলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি রেলের রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ‘বি’ ক্যাটাগরির একটি স্টেশনের জন্য তিনজন স্টেশনমাস্টার, তিনজন পয়েন্টসম্যান (পি-ম্যান), একজন পোর্টার, একজন বুকিং সহকারী ও তিনজন গেটকিপার থাকার বিধান রয়েছে। আর ‘ডি’ ক্যাটাগরির রেলস্টেশনের ক্ষেত্রে মাত্র একজন সহকারী স্টেশনমাস্টার অথবা একজন বুকিং সহকারী এবং একজন পোর্টার ও একজন গেটকিপার থাকলেই চলে। যদিও মাত্র একজন মাস্টার দিয়েই ‘ডি’ ক্যাটাগরির অনেক স্টেশন পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বন্ধ থাকা ৪৮টি স্টেশন পুনরায় চালু করার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে শুধু স্টেশন চালু করলে হবে না, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেনের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মানও বাড়াতে হবে। বন্ধ স্টেশনগুলো সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার তাগিদ দেন নাগরিক নেতা নাজের হোসাইন।