মোসাইদ রাহাত ::
সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান-চলতি নদী বালু-পাথর মহাল দীর্ঘ ৪ বছর বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। অপরদিকে নদীতে বালু-পাথর জমে দিন দিন নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া মহাল বন্ধ থাকায় বালু-পাথর উত্তোলনে সম্পৃক্ত লাখো শ্রমিক এবং হাজারো ব্যবসায়ী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা অবিলম্বে মহালটি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উজান থেকে প্রতি বছর ঢলের সাথে বিপুল পরিমাণ বালু-পাথর ধোপাজান-চলতি নদীতে ভেসে আসে। আর এই বালু-পাথর উত্তোলন করে সদর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম ইব্রাহিমপুর, সদরগড়, আমিরপুর, কুরতলা, অক্ষয়নগর, সৈয়দপুর, মুসলিমপুর, বালাকান্দা, হুড়ারকান্দা, সাহেবনগর, কাইয়ারগাঁও, পূর্ব ডলুরা, ভাদেরটেক, জিনারপুর, আদাং, মথুরকান্দি, পশ্চিম ডলুরা গ্রামসহ অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলা ও বাইরের জেলার শ্রমিকেরা এই নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
২০১৯ সালে ধোপাজান-চলতি নদীর কোয়ারিতে বালু-পাথরের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ও নদীর পার কাটার শঙ্কা থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশে বন্ধ করা হয় এই মহালের ইজারা। তবে দীর্ঘ চার বছর নদীতে বালিপাথর উত্তোলন বন্ধ থাকা এবং ২০২০ ও ২০২২ সালের পর পর বন্যায় পাহাড়ি ঢলে নদীতে বালু-পাথরের পরিমাণ বৃদ্ধিতে মহাল ইজারার সম্ভাবনা বাড়লেও আইনানুগ কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
স্থানীয় একাধিক শ্রমিক জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের অধিক সময় ধরে নদীতে বালি-পাথর উত্তোলন করে জীবিকা সংগ্রহ করে আসছিলেন তারা। নৌকা, বাল্কহেড বা কার্গো লোড – আনলোডে নিয়োজিত ছিলেন হাজার হাজার শ্রমিক। পরিবারের একাধিক সদস্য এর সাথে যুক্ত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে মহালের ইজারা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন খরচ যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের। অন্যত্র চাকরিও পাচ্ছেন না তারা।
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের দেলোয়ার নামের এক শ্রমিক বলেন, নদী বন্ধ থাকায় গ্রামে বেকার যুবকের সংখ্যা বেড়েছে। এতোদিনেও কোনো কাজ যোগার করা যায়নি। নদীতে বালি পাথর তুলতে পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই বেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।
বালু-পাথর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ধোপাজান চলতি নদীটা আমাদের আয়ের উৎস ছিল। কিন্তু মহাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার দিন কাটছে। অনেক টাকা খরচ করে ইজারা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু কাজ শুরু করার আগেই হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেন। এতে করে ব্যবসার সব টাকা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে এই মহাল বন্ধ থাকায় নদীতে বালু পাথর জমে গেছে। সরকার যদি আমাদের আবার আগের মতো বালু-পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে দেন তাহলে আমরা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।
আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল হক বলেন, ধোপাজান চলতি নদীর মাধ্যমে এখানে কয়েক হাজার পরিবারের কর্মসংস্থান হয়, ঘরে খাবার পৌঁছায়। তবে ৪ বছর ধরে মহাল বন্ধ থাকায় আমাদের দুর্বিষহ দিন কাটাতে হচ্ছে। একেতো ব্যবসার জন্য লাখ লাখ টাকা নষ্ট হয়েছে। আমি চাই নদীটা আবারও খুলে দেয়া হোক। আমরা যেন আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি। এই নদী বন্ধ থাকায় সরকার নিজেও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
ছমির উদ্দিন নামের শ্রমিক বলেন, বন্যার পানিতে উজান থেকে অনেক বালি নদীতে এসেছে। বালির স্তূপ জমে রয়েছে। আমরা নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কবে মহাল খুলবো আর আমরা কাজে যেতে পারবো। জিনিসপত্রের দাম বেশি। চরম আর্থিক সংকটে আছি। সরকার ইজারার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিলে আমরা সবাই লাভবান হবো, আমাদের পরিবারের সদস্যরা দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারবে।
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ধোপাজান-চলতি নদীতে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৪ বছর যাবৎ নদীতে বালু পাথর উত্তোলন হয়না। যারা নদীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন তারা মহাসমস্যায় রয়েছেন। মহালটি চালু হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ফলে এলাকাবাসীর জীবনমানের পরিবর্তন হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ধোপাজান-চলতি নদী খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বন্যায় বালু-পাথর আসায় আমরা তাদের অনুরোধ করেছি ইজারা দেয়ার জন্য। খনিজ বিভাগের লোকেরা এলাকার পরিদর্শন করেছেন। তারা অনুমতি দিলে নদীতে আবারও বালু-পাথর উত্তোলন করা যাবে। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।