সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দীর্ঘদিন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম স¤পর্কে ভালোভাবে রপ্ত করেন আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ (৩০)। সেই ধারণা থেকে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপর ওই গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির এলাকায় ঘুরতে গিয়ে বলতেন বিশেষ অভিযানে সেখানে গেছেন। এমনকি স্থানীয় থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভুয়া পরিচয় দিয়ে দ্বিধায় ফেলতেন, বিশেষ অভিযানের নামে তাদের সহায়তা চাইতেন। টার্গেট এলাকায় দু-একদিন ঘুরে বাড়িঘর রেকি করতেন। এরপর একরাতে সেসব বাড়িতে অভিযানের নামে তল্লাশি চালিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিতেন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি নাহিদের। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নারায়ণতলা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অভিযানের নামে লুট ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪। আটকের সময় তার কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক পরা ছবি জব্দ করা হয়।
বৃহ¯পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিবরণে খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলী বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশির নামে লুটপাট এবং শ্লীলতাহানি করে নাহিদ ও তার সঙ্গীরা। ঘটনা বুঝতে পেরে এ সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু কৌশলে মূলহোতা নাহিদ ও স্থানীয় বাসিন্দা বিজন রায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করতেন তারা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। যেহেতু স্থানীয়রা বিজনকে চিনতে পারেন তাই তার নামও উল্লেখ করা হয়। আসামিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এর ভিত্তিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এজাহারনামীয় আসামি বিজন রায়কে মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-৪। বিজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান
চালিয়ে মূলহোতা নাহিদকে আটক করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ডলার নাহিদ বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে মানুষের কাছে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন নাহিদ। ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও নিজেকে ১৯৯৬ সালের এসএসসি ব্যাচ দাবি করতেন নাহিদ। ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি কো¤পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের কাছ থেকে বাহিনীর কার্যক্রম স¤পর্কে জানতে পারেন। এসব ভালোভাবে রপ্ত করে গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে নিজেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন।
র্যাব জানায়, গত চার-পাঁচ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে নাহিদের সঙ্গে বিজনের পরিচয় হয়। রাজধানীতে বিজনের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি তার বাড়ি সুনামগঞ্জ হওয়ায় নাহিদ সেখানে যান। বিজন সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুস¤পর্ক ছিল। পরে বিজনের সঙ্গে সুনামগঞ্জে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে কৌশলে নিজেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের কথা জানান এবং তাদের সহায়তা চান। এরপর বিজন ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে লুটের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ জানুয়ারি রাতে নারায়ণতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলীর বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশির নামে লুটপাট এবং শ্লীলতাহানি করে নাহিদ ও তার সঙ্গীরা। ঘটনা বুঝতে পেরে এ সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু কৌশলে মূলহোতা নাহিদ ও স্থানীয় বাসিন্দা বিজন রায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
র্যাব জানায়, নাহিদ গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকা ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা সংস্থার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়ি থেকে নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে।