মোসাইদ রাহাত ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের গোবিন্দ নগর গ্রামে বসবাস করেন শংকর দেবনাথ ও অর্জুন দেবনাথ। সম্পর্কে দুইজন ভাই হওয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গেল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই ভাইয়ের বাড়িতে আগুন লাগায় দুষ্কৃতকারীরা, এতে ঘরের কিছু অংশ জরুরি কাগজপত্র ও গরুর খাবার খড় পুড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস আসলে তারা প্রাথমিক তদন্তে দেখতে পায় পেট্রল দিয়ে কে বা কারা শংকর ও অর্জুনের বাড়িতে আগুন লাগায়। ঘটনাক্রমে দেখাযায় সুনামগঞ্জের খোলা বাজারে অবাধে জ্বালানি তেল বিক্রি বাড়ছে। যার জন্য এ ধরনের নাশকতার মাত্রা বাড়তে পারে বলে মনে করে ফায়ার সার্ভিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট, ষোলঘর পয়েন্ট, কাজির পয়েন্ট, ময়নার পয়েন্ট, উকিলপাড়া, বিহারী পয়েন্ট, মল্লিকপুর, মোহাম্মদপুর, সুরমা নদীর ওপারে ইব্রাহিমপুর, রাধানগর, টুকেরবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজার থেকে শুরু করে তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক, জগন্নাথপুরসহ জেলার যত্রতত্র পাওয়া যায় খোলা জ্বালানি তেল।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অকটেন, পেট্রল মিলছে শহরের পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে গ্রাম গঞ্জের বাজারে। নিয়ম অনুযায়ী অকটেন, পেট্রলের মতো দাহ্য পদার্থ বিক্রি করতে পারবে অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিলাররা। তবে সুনামগঞ্জের যত্রতত্র রাস্তার পাশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অকটেন, পেট্রলের মতো জ্বালানি। এসব তেল বিক্রির জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এর তোয়াক্কা করেছেন না বিক্রেতারা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের লিডার হায়দার আলী বলেন, গেল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একই পরিবারের দুই ভাইয়ের বাড়িতে আগুন লাগে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে আমরা পেট্রল দিয়ে আগুন লাগানোর সম্পৃক্ততা পাই। আর দেখা গেছে উপজেলার বিশ্বম্ভরপুরের পয়েন্টে পয়েন্টে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি। এভাবে অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে নাশকতা এবং দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। এটিকে আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয় কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীই এটি মানেন না। যে যেভাবে পারে সেভাবেই জ্বালানি তেল বিক্রিতে বসে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজির পয়েন্টের একজন জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, দোকান খুলেছি পৌরসভা থেকে লাইসেন্স নিয়ে। তবে তেলের জন্য যে লাইসেন্স নিতে হয় এটা আমার জানা নাই। এলাকার কাউকে তো লাইসেন্স নিতে দেখি না। আর তেল বিক্রি করে আমরা বেশি একটা লাভ করতে পারি না। তাও পেটের দায়ে রাস্তার পাশেই নিয়ে রাখছি। যাদের তেল শেষ হয়ে যায় তখন তারা নিজেই এসে বাইকে করে তেল নিয়ে যায়।
তবে খোলা বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সুনামগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের সদস্য মো. আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি করা হয়। রাস্তার পাশে একসাথে তিনটি চারটি করে দোকানও দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। আমরা দুর্গম এলাকায় থাকতে পারি কিন্তু এরকম অবাধে জ্বালানি তেল বিক্রি আমাদের জন্য হুমকি, যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেলে এর দায় কেউ নিবে না।
শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা দেবব্রত দাস বলেন, পাড়া-মহল্লায় জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। শহরের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ট্রাফিক পয়েন্ট। এখানেই প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে বিক্রি হয় জ্বালানি তেল। এগুলো প্রশাসনের অভিযানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। অনেকসময় অসাধু বিক্রেতারা পেট্রলে কেরোসিন ব্যবহার করে ভেজাল তেল ধরিয়ে দেয়। অবাধে বেড়ে যাচ্ছে খোলাবাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি। এগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের মানের বিষয়টা দেখে বিএসটিআই। আমাদের এটি দেখার সুযোগ নেই। তবে খোলা বাজারে তেল বিক্রির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমরা আভিযানে যাব।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, নিয়ম মেনেই জ্বালানি তেল বিক্রি করতে হবে। যদি কেউ অবৈধভাবে তেল বিক্রি করেন তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য হবে। আমরা এ ব্যাপারে অভিযানে নামব।