অঞ্জন পুরকায়স্থ ::
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উজান লালপুর গ্রাম। সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত এই গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি বাজার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ভৈরব থেকে লঞ্চযোগে সিলেট যাওয়ার সময় এই উজান লালপুর ছোট বাজারে উঠেছিলেন। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে একই গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মুখলেছুর রহমানের আহ্বানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য এই বাজারের নামকরণ করা হয় ‘মুজিবগঞ্জ বাজার’।
এ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম তালুকদার বলেন, গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম এতিম উল্লাহ তালুকদারের ৪ পুত্র মরহুম তরিক উল্লাহ তালুকদার, আইয়ুব উল্লাহ তালুকদার, তৈয়ব আলী তালুকদার ও ওয়াজেদ আলী তালুকদার ১৯৭৫ সালে এলাকাবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বেচা-কেনার স্বার্থে মুজিবগঞ্জ বাজারের নামে ১৬ বিঘা জমি সাব কাবালা দান করে দেন। সেই থেকে বাজারটি পল্লীবাসীর জীবিকা নির্বাহের সহায়ক হয়ে উঠে। এ পর্যন্ত বাজারে স্থায়ী- অস্থায়ী অর্ধশত দোকান ঘর তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজার লোকের সমাগম হয় বাজারটিতে।
এদিকে ২০২১ সাল থেকে সুরমা নদীর কড়াল গ্রাসে পড়ে ঐতিহ্যবাহী বাজারটি। চলতি বছরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০টি কাচা-পাকা গৃহ ও ভিট। হুমকির মুখে আছে আরো ২০টি স্থাপনা। মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বস নেমে বিলীন হয়ে যেতে পারে এই স্থাপনাগুলো। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন দোকান মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. দিলোয়ার হোসেন, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, মুরব্বি রহিম উদ্দিন, চা বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন, সবজি বিক্রেতা রোজিনা বেগম, শাফায়েত উল্লাহ ফারুক ও নুর আলী বলেন, আমাদের বাজারটি হুমকির মুখে রয়েছে। এমন তীব্র ভাঙন আগে কখনো দেখিনি। বাজারের বাকি অংশ ভেঙে গেলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না। বাজারটি রক্ষায় সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
মুজিব বাজার কমিটির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি ডা. কামাল তালুকদার বলেন, লক্ষ্মীপুর মৌজায় ৪১৯নং দাগে অবস্থিত বাজারের ১৬ বিঘা ভূমি থেকে ১০ বিঘা ভূমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। বাকি অংশ সরকার নদী শাসনের প্রকল্পের আওতায় এনে সুরক্ষার জন্য ব্লক, বালির বস্তা দিয়ে প্রতিরক্ষা দেয়ার অনুরোধ জানাই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালগঞ্জ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, আমরা নদী ভাঙন এলাকা দেখেছি। ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত দেব বলেন, বাজারটি সুরক্ষার জন্য পাউবো’র মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।