স্টাফ রিপোর্টার ::
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বুধবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এ সময় তিনি বাঁধের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এমপি মিসবাহ বলেন, এবার বাঁধের সংখ্যা অনেক বেশি। কেন হয়েছে তা আমিও জানি না। অনেকে বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন এবার বাঁধের বরাদ্দ ও অনেক বেশি। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর ফসল রক্ষা বাঁধের বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৪ কোটি টাকা। প্রতি বছর বাঁধের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমপি মিসবাহ আরও বলেন, জেলা প্রশাসক বলেছিলেন এবার নতুন করে বাঁধ নির্মাণ হবে না। তাহলে বাঁধের পরিমাণ বেড়ে গেলো কীভাবে? তিনি বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ২ শত কিলোমিটার বাঁধ বেশি হয়েছে। এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বাঁধের দৈর্ঘ্য কেন বেড়ে গেলো তা তদন্ত করে দেখা দরকার।
এমপি মিসবাহ বলেন, এখানকার স্থানীয় মানুষের পরামর্শে বাঁধ নির্মাণকাজ করতে হবে। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের হাত থেকে শহর ও গ্রাম বাঁচাতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনতে হবে। ড্রেজিং ব্যবস্থা ধারাবাহিক রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন থেকে বাঁচাতে শহর এলাকা, সুরমার উত্তরপাড় মইনপুর, জগন্নাথপুর, ইব্রাহীমপুর ও সদরগড় এলাকায় সংস্কারকাজের জন্য ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সুনামগঞ্জ শহরকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। বেশি বেশি উন্নয়নের মাধ্যমে এই জেলা শহরকে আরও সুন্দর করা উচিত। তিনি বলেন, বিগত ১৪ বছরে মাত্র ৩ বার ফসল পাওয়া গেছে। প্রতিবার অকাল বন্যায় হাওরের ফসল তলিয়ে নিয়ে যেতো। তিনি বলেন, খাল, বিল, নদী খননের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে বাঁধের কাজে লাগালে খরচও অনেকটা কমে আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে কোনো জায়গা পতিত রাখা যাবে না। সকল পতিত জায়গাও চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, নদী খনন করে সুনামগঞ্জ শহরকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, আমাদের পৌর শহর প্রতিবার বন্যায় তলিয়ে যায়। শহর বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল নির্মাণ করতে হবে।
পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মল্লিক সাঈদ মাহবুব বলেন, সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে স্থানীয় মানুষের পরামর্শে করলে খুবই ভাল হয়। তিনি বলেন, বাঁধ নিয়ে সভা করলে বাঁধ নির্মাণ কাজে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের স¤পৃক্ত রাখা উচিত। তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জ শহরকে অবশ্যই বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাওর উন্নয়নে প্রাধান্য দেন। আমরাও হাওর উন্নয়নকে গুরুত্ব দেই। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে দুর্নীতি হলে ছাড় দেয়া যাবে না। দুর্নীতির ক্ষেত্রে তথ্য পেলেও ছাড় দেয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, গতবার সকলে মিলে কাজ করেছি। এবার আরও ভাল করে কাজ করতে হবে। ফসলরক্ষা বাঁধ কাজের মেয়াদ শেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি। বাঁধের নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত দেয়া হলো। এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। উপমন্ত্রী বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজে ২৬ জন সার্ভেয়ার রয়েছেন। ফসল তোলার আগ পর্যন্ত তারা থাকবেন। বাঁধের কাজে সংশ্লিষ্ট কাউকে ছুটি দেয়া যাবে না। ফসল তোলার আগ পর্যন্ত থাকতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে ছুটি বিবেচনা করা হবে।
উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি আরও বলেন, এবার নির্বাচনের বছর। ফসল রক্ষা বাঁধে কারচুপি করা যাবে না। অনিয়ম করে দুর্নীতি করা যাবে না। অবশ্যই ভালমানের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি সুনামগঞ্জে অনেকবার এসেছি। অন্তত ১৬ বার এসেছি। তিনি পাউবো কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব সময় সাংবাদিকদের তথ্য দেবেন এবং তাদেরকে নিয়ে বাঁধ পরিদর্শন করবেন। যারা ভাল কাজ করবেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। দুর্নীতি করলে বিভাগী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন উপ-সচিব আরিফুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক এসএম শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার, সুনামগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার ও মো. শামসুদ্দোহা।
সভায় বক্তব্য রাখেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তানভীর আশরাফী চৌধুরী মামুন, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক অমল কর, সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাংবাদিক পংকজ দে, শাহজাহান চৌধুরী, আল হেলাল, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, বিন্দু তালুকদার প্রমুখ।