স্টাফ রিপোর্টার ::
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৫৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময়ে সুন্দরভাবে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা জানান।
পানিস¤পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, হাওরের ফসল ঘরে ওঠার আগ পর্যন্ত ছুটি পাবেন না সুনামগঞ্জ পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাঁধের কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য ২৬ জন সার্ভেয়ার কাজ করছেন। এতে সুনামগঞ্জ পাউবোর জনবল সংকট নিরসন হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই দুই মাস কঠোরভাবে ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ মনিটরিং করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। যাতে বাঁধের কাজ সঠিকভাবে হয়। এই দুই মাস সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাঁধ নির্মাণে কোনও ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাওরবাসী ও সাংবাদিকদেরকে বাঁধের যেকোনো সমস্যার বিষয়ে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জানানোর আহ্বান জানান উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাঁধের যেকোনো সমস্যা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন। গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে বাঁধ নির্মাণ করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরের বাঁধ নির্মাণে স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে পাউবো ও পানিস¤পদ মন্ত্রণালয়।
হাওরবাসী যাতে নিরাপদে ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি উল্লেখ করে উপমন্ত্রী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিস¤পদ মন্ত্রণালয়কে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। হাওরবাসী যাতে হাসিমুখে বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
চলতি বছর ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় হাওরের বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই চলতি বছর বেশি কাজ করা হচ্ছে। এবার এক হাজার ৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে। এজন্য সরকার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও ২৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৫৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ঘরে ফসল তুলতে পারবেন কৃষকরা।
প্রতিটি উপজেলায় দুজন সার্ভেয়ার বাঁধের কাজ দেখভাল করছেন উল্লেখ করে উপমন্ত্রী বলেন, পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আজ থেকে সুনামগঞ্জে অফিস করবেন। ৭ মার্চের আগে বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ১২টি উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ দু’বার করে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।
বাংলাদেশ একসময় বিদেশনির্ভর ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ হয়েছে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, সবাই মিলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে হাওরের ফসল রক্ষা করে কৃষকের ঘরে তুলে দিতে চাই। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
পানিস¤পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম আরও বলেন, কৃষি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষককে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সারের দাম কয়েক দফা কমিয়ে বর্তমানে সারের দাম ইউরিয়া ২২ টাকা কেজি, টিএসপি ২২ টাকা কেজি, ডিএপি ১৬ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা কেজি। আর বিএনপির সময়ে ছিল টিএসপি ৮০ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা, ইউরিয়া ২০ টাকা কেজি। সারে অন্য বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলেও এ বছর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারের দাম বেড়ে গেছে। এরপরও সারের কোনো ঘাটতি নেই।
তিনি বলেন, কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর কয়েক লাখ কৃষককে বিনামূল্যে ভালো মানের উন্নত জাতের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে, এর আওতায় ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ। ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। নড়িয়া উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রায় ৫০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, এর আওতায় বিনামূল্যে বীজ, সার, ফলের চার, সেচ যন্ত্র বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, হাওর অঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্প করা হচ্ছে। আর নদীভাঙন ঠেকাতে সারা দেশে বিভিন্ন স্থায়ী প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সারাদেশে নদীভাঙন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী বাঁধ করা হচ্ছে, বাঁধ প্রশস্তকরণ হচ্ছে, বনায়নও করা হচ্ছে। যেখানে যা করা প্রয়োজন, তাই করা হচ্ছে।
এ সময় উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মল্লিক সাঈদ মাহবুব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি প্রমুখ।