‘শহরের ৫টি খাল ছয় মাসের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ’। এটি গত সোমবারের (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম। তিন কলামে বিস্তৃত এই শিরোনামÑ সুনামগঞ্জ শহরের ৫টি খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। এই পাঁচটি খাল হচ্ছেÑ তেঘরিয়া, বড়পাড়া, কামারখাল, বলাইখালি ও নলুয়াখালি। শিরোনামের নিচে লেখা হয়েছে ‘সুনামগঞ্জ শহরের পাঁচটি খাল আগামী ছয় মাসের মধ্যে দখলমুক্ত করে তা সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’ এই নির্দেশ সুনামগঞ্জবাসীকে সত্যিকার অর্থেই আশ্বস্ত করেছে। যদিও যাঁরা খাল দখল করে বসে আছেন তাঁরা এই সংবাদে না-খোশ হবেন।
আমারা জানি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বিচারব্যবস্থা অধিকতর মাত্রায় জনবান্ধব হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বিদ্যমান সমাজ সংস্থিতির সার্বিক অবস্থা এমন যে, এখানে আদালতের বাইরের অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান এখনও আদালতের সব নির্দেশ কার্যকর করার মতো উপযুক্ত হয়ে উঠেনি বা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বৈরীভাবাপন্ন। এই অবস্থাকে কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রের বাইরে রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করে বিভিন্ন রাজনীতিক দল, প্রশাসন, ব্যবসায় ও জনগোষ্ঠীর ভেতরে গড়ে উঠা চক্রের (সিন্ডিকেট) প্রতি নির্দেশ করেন। যেটাকে কেউ কেউ মাফিয়াতন্ত্রের রাজত্ব বলে অভিহিত করতে কসুর করেন না, যে-রাজত্বের রাজারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রেহাই পেয়ে যাওয়ার অদ্ভুত এক সামর্থ্যরে অধিকারী। এমতাবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশ প্রায়শই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর উপেক্ষার সাংস্কৃতিক পরিসরে নিদ্রিত থাকে। কিন্তু আমরা আদালতের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কারণ আদালতই এখনও পর্যন্ত অধিকার বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল।
খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রথমেই আমাদের পৌর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, ভূমি প্রশাসনকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে এবং সর্বোপরি জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাছাড়া জনগণের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। তবেই বাস্তবায়িত হবে খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশ।
ভুলে গেলে চলবে না এই নির্দেশ কেবল জনবান্ধব নয়, প্রকৃতিবান্ধবওÑ যে-প্রকৃতি অন্যান্য লক্ষ লক্ষ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির সঙ্গে মানব প্রজাতিকেও লালন করে থাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় হাইকোর্টের নির্দেশটি মানবপ্রজাতিকে রক্ষার চাবিকাঠি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষারও নির্দেশ বটে।