শামসুল কাদির মিছবাহ ::
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে নূরুল হুদা মুকুটকে সভাপতি ও নোমান বখত পলিনকে সাধারণ স¤পাদক করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তারা জানান, দীর্ঘ দিন পর নেতৃত্ব পরিবর্তন করায় দলের বন্ধ্যাত্ব কেটেছে। যোগ্য নেতৃত্ব পেয়ে দল চাঙা হয়ে উঠেছে।
তাঁরা আরও বলেন, বিগত দিনের কমিটিতে প্রকৃত ত্যাগী ও মুজিব আদর্শের সৈনিকদের চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়েছে। হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীদের দলে জায়গা দেয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক জেলায় সময় না দিয়ে ঢাকা ও দেশের বাইরে সময় কাটিয়েছেন বেশি। ফলে সাত বছরে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এর প্রমাণ বিগত ইউপি নির্বাচনে সারা জেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি। সদর উপজেলার একটিতেও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি এবং জেলার ৮৮ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩১টি ইউনিয়নে জয় লাভ করেছিল। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের জন্য এই ভরাডুবি হয়েছে। এছাড়াও সাত বছরে মাত্র কয়েকটি মিটিং ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা ছিলো না শীর্ষ নেতৃত্বের। এজন্য হতাশ ছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ দিন পর হলেও নতুন কমিটিতে যোগ্য, সাহসী এবং পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্ব দেয়ায় আশার সঞ্চার হয়েছে তৃণমূলে। জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফ উল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, রাজপথের পরীক্ষিত নেতা নূরুল হুদা মুকুট মহোদয়কে জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় তৃণমূলের আপামর নেতাকর্মীরা খুশিতে আজ আত্মহারা। পুরো সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে বইছে খুশির জোয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দলীয় সভানেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার কাছে এজন্য আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা, তাঁরা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগকে জেলা থেকে একেবারে ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সকল উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি কমিটিতে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান দিয়ে মূল্যায়িত করবেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক অমল কর বলেন, দীর্ঘ দিন পরে জেলা আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয়েছে এটা সময়ের সবচেয়ে উপযোগী কমিটি। যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে যখন বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিলো তখন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন নূরুল হুদা মুকুট। তাঁকেসহ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন যে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়েছে স্বাধীনতার পর সুনামগঞ্জের সবচেয়ে শক্তিশালী কমিটি বলে আমি মনে করি। এতোদিন দলের ত্যাগী নেতা যারা বঞ্চিত ছিলেন, উপেক্ষিত ছিলেন আমরা আশা করি এবার তারা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত আনন্দিত। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা ও দলের দুঃসময়ের কা-ারি নূরুল হুদা মুকুট সাহেবকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া মরহুম হোসেন বখতের পরিবারের আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে। দলের জন্য আয়ূব বখত জগলুলের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই পরিবারকে মূল্যায়ন করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত খুশি। আমরা আশা করছি সুনামগঞ্জ জেলায় নতুন এই কমিটির মাধ্যমে দল অত্যন্ত গতিশীল হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় আমি নেত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার একটাই লক্ষ্য থাকবে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা। কোনো কোন্দলকে স্থান দেবনা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাবেক ত্যাগী ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শিক নেতাদেরই মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন তৃণমূলে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শের সৈনিক ও দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং বঞ্চিত নেতাকর্মীদের নিয়ে সুনামগঞ্জ সদরসহ সকল উপজেলার ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে তৃণমূলের মতামতের জয় হয়েছে। তৃণমূলের খোঁজ খবর নিয়ে নেত্রী আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেছেন। আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত করে নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। যোগ্য ও ত্যাগী নেতৃত্ব বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমি দলের সভাপতি হিসেবে সাধারণ স¤পাদকসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সুনামগঞ্জের ৫টি আসনই নেত্রীকে উপহার দেবো।