পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে যে, নিয়মিত ক্লাস নিলেও দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি বড় অংশ নিজেদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট নন, নিজেদের জ্ঞানের বিষয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী নন। এই সংবাদের নিহিতার্থ কী? এমন একটি প্রশ্ন স্বভাবতই যে-কারও মনে উদ্রেক হতে পারে এবং তিনি ইচ্ছে করলে নিজের মতো করে সেটার একটি উত্তরও সাজিয়ে নিতে পারেন এবং উত্তরটি ইতিবাচকতার স্পর্শবঞ্চিত হবার আশঙ্কাই অধিক।
‘শিক্ষাজাতির মেরুদ-’ এই অপ্তবাক্যটি অনেক পুরনো এবং সকলেই জানেন ও উপলব্ধিও করেন। এই শিক্ষাকে অবলম্বন করেই সাধারণত যে-কোনও জাতি অগ্রগতি-উন্নয়নের চূড়ায় আরোহণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। যে-জাতি শিক্ষা-দীক্ষায় যতো উন্নত তারাই বিশ্বনেতৃত্বের আসন অলংকৃত করে থাকে এবং সেটার জোরে বিশ্বজুড়ে কার্যত শাসন ও শোষণ চালায়, অথবা বিপরীতে বিশ্ব মানবসেবায় নিয়োজিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
প্রজননের নিয়মানুসারে মানুষ প্রকৃতপ্রস্তাবে মানবেতর প্রাণীর চেয়ে বেশি কীছু নয়, সে পশু হয়েই জন্ম নেয়। জন্মের পর কোনও মানুষ যদি পশুদের সঙ্গে বড় হয়, তবে তার মধ্যে মানবত্বের উন্মেষ ঘটে না, অর্থাৎ তার মেধার মানবিক বিকাশ সম্ভব হয় না। অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে। শিশুর মেধার মানবিক বিকাশ লাভের জন্যে, প্রকারান্তরে শিশুটিকে মানুষ করে তোলার জন্যে, মানুষ প্রথমে পারিবারিক পরিসরেও পরে বিদ্যালয়ে বিদ্যাশিক্ষার সামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছে। এই বিদ্যালয়েÑ বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে Ñ যাঁরা শিক্ষা দেবেন তাঁদের যদি ‘বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান’ অনধিগত বা তাঁদের অধিগত জ্ঞান অপর্যাপ্ত হয়, তবে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বিদ্যার্জন অপূর্ণ থেকে যাবে এবং প্রকারান্তরে জাতির মেরুদ-টা কার্যত দুর্বল হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে, প্রাযুক্তিক উন্নতি এতোটাই হয়েছে যে, বর্তমানকালে বিশ্ব সমাজে জাতীয় গৌরব নিয়ে কোনওমতে টিকে থাকতে হলেও জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ মানুষকে বিদ্যাশিক্ষায় চূড়ান্ত দক্ষতা অর্জন করতেই হবে, অন্যথায় দেশ-জাতি পিছিয়ে পড়বে, রাষ্ট্র পর্যবসিত হবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে এবং পরদেশ নির্ভর কিংবা পরজাতি রাষ্ট্র নির্ভর হয়ে জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে সমর্পণ করে দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে অধীনতামূলক মিত্রতানীতিকে শিরোধার্য করে।
উদ্ভূত শিক্ষা পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয় যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দিতে হবে, শিক্ষানীতিকে করতে হবে বিজ্ঞানমুখি ও সর্বাধুনিক, কোনও ধরনের পশ্চাদপদতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।