স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওরে চলমান ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ এবং ক্ষোভ বাড়ছে। জেলার দিরাই, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার শতাধিক বাঁধের কাজ পরিদর্শন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার বোরো ফসলের সুরক্ষায় ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে রেকর্ড সংখ্যক বাঁধের কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হয়নি। যেসব বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে তাঁর গতিও মন্থর। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ক্লোজার এখনো উন্মুক্ত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১৬ দিন বাকি থাকলেও এখনো অনেক বাঁধের কাজই শুরু হয়নি। বাঁধের দুরমুজ, কম্পেকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনের নেতারা। কাজের অনুপাতে বরাদ্দ বেশি ও কোনো কোনো প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণকাজের এই অবস্থায় ২৮ ফেব্রুয়ারিতে কাজ অর্ধেকও শেষ হবেনা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নেতৃবৃন্দ। তারা দ্রুত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাচিভাঙ্গা হাওরের পিআইসি নং – ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ এবং জামখলা হাওরের-৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১নং বাঁধের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি ও দরগাপাশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি মো. সাজ্জাদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সঈদ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা মিজানুর রহমানসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
পরিদর্শন শেষে নেতৃবৃন্দ বাঁধের কাজে বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরেন। তারা জানান, কাচিভাঙ্গা হাওরের ২৩নং পিআইসিতে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বাঁধের নিকট হতে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। জামখলা হাওরের ৪০নং পিআইসির মাছুখালি ক্লোজারের ৩৬, ৩৭নং পিআইসির জামখলা ক্লোজারের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ওয়ার্ক অর্ডার দেরিতে পাওয়ায় কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৪নং পিআইসির সভাপতি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল বলেন, আমাদের সংগঠনের নেতারা প্রতিদিনই বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করছেন। আমরা বাঁধের কাজের গতি নিয়ে হতাশ। এখনো অনেক বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। যেখানে সবেমাত্র কাজ শুরু হয়েছে সেখানে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে না। এছাড়াও বাঁধ নির্মাণকাজের অনেক গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমরা এবার বাঁধ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। নির্ধারিত সময়ে কাজ যেহেতু শুরু হয়নি, তাই কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। কাজের গতি নিয়ে আমরা হতাশ। এভাবে চলতে থাকলে হাওরবাসীর জন্য সামনে দুঃসংবাদ রয়েছে। আমরা আশা করবো, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন। হাওরবাসীর লালিত স্বপ্ন বোরো ধানের সুরক্ষা দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ফসলহানি হলে এর দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।