1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মতিউর-ইমন আউট : মুকুট-পলিন ইন

  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

 

শামস শামীম ::
উৎসবমুখর সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ, প্রধান অতিথি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বক্তব্যের শেষ দিকে যখন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেনের পকেট থেকে সাদা কাগজের চিরকুট হাতে নেন তখন নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা ছিলেন দারুণ অস্থির। এরপরেই তিনি ছোট ছোট বাক্যে কাব্যিক ভঙ্গিমায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আগামীদিনের কা-ারী নূরুল হুদা মুকুট ও নোমান বখত পলিনের নাম ঘোষণা করেন। পিনপতন নীরবতায় মাঠভর্তি হাজার হাজার নেতাকর্মী নাম ঘোষণার পরই স্লোগানে স্লোগানে অভিনন্দন জানান। মাঠে উপস্থিত নূরুল হুদা মুকুট ও নোমান বখত পলিনের সমর্থকরা মুহুর্মুহু করতালি এবং স্লোগান দেন। নাম ঘোষণার পরে প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের নূরুল হুদা মুকুট ও নোমান বখত পলিনের হাত ধরে হাত উঁচিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদেরকে তাদেরকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের নতুন নেতাদের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার নির্দেশনা দেন। ঘোষিত এই কমিটিকে তৃণমূলের কাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত কমিটি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই দুই নেতার নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল হবে বলে মনে করেন তারা।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে দেওয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজপথ দখলে রেখে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করে ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার জবাব দেওয়া, রাজপথ দখলে রাখা, তৃণমূলকে উজ্জীবিত করাসহ দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তৃণমূলে শক্তিশালী নেতৃত্ব বাছাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মাঠ পর্যায়ের তথ্যও সংগ্রহ করেছেন তিনি। এসব বিবেচনা করে শেখ হাসিনা গত তিন দশক ধরে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্বদানকারী তৃণমূলের জনপ্রিয় ও কর্মীবান্ধব নেতা নূরুল হুদা মুকুটকে সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হোসেন বখতের ছেলে নোমান বখত পলিনকে সাধারণ সম্পাদক করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিকে। শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর নামই তিনি ঘোষণা করেন উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনে উৎসবমুখর সম্মেলনে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, মতিউর রহমান ও ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুনামগঞ্জে রাজপথে কাক্সিক্ষত ও সাহসী কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। সুনামগঞ্জে বিএনপির তুলনায় তারা কর্মসূচিতে পিছিয়ে ছিলেন। গত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভুল প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া গত সাত বছরে মাত্র তিনটি উপজেলার সম্মেলন করতে পেরেছিলেন। এসব কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের প্রতি বিরক্ত ছিল।
অন্যদিকে, দলের প্রধান পদে না থাকার পরও ২০১৪ সনের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজপথে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন নূরুল হুদা মুকুট। তিনি জামায়াত-বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলে এবং কর্মীদের উজ্জীবিত করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে সুনামগঞ্জের রাজপথ দখলে রেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ওই সময় সাহস পেয়েছিল তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
এদিকে, নোমান বখত পলিনও তার পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনীতির উত্তরাধিকারের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন সাহসের সঙ্গেই। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি শহরের স্বপ্নবাজ তরুণদের নিয়ে বসন্ত উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করেছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কর্মসূচিসহ সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে গত কয়েক বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। করোনা, বন্যাসহ নানা আপদকালে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাঁর বড়ভাই প্রয়াত আয়ূব বখত জগলুলের মৃত্যুর পরই তিনি মূলত আমেরিকা থেকে স্থায়ীভাবে সুনামগঞ্জে রাজনীতি করতে ছুটে আসেন। তাদের পরিবারের সমর্থনে একটি বড়ো কর্মী এবং সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে জেলাজুড়ে। তাদেরকে এক মোহনায় এনে গত কয়েক বছর ধরে কর্মসূচি পালন করেছেন নোমান বখত পলিন। তার এই সাংগঠনিক প্রজ্ঞা ও পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা জানতেন শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
নূরুল হুদা মুকুট ও নোমান বখত পলিনের সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই কঠিন এই সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভার তাদেরকে অর্পণ করা হয়েছে বলে মনে করে তৃণমূল। এই দুই নেতার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী লীগের প্রকৃত আদর্শের অনুসারী ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে গত জাতীয় সম্মেলনে নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী। আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় আমি নেত্রী ও আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার একটাই লক্ষ্য থাকবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। কোনো কোন্দলকে স্থান দেবনা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাবেক ত্যাগী ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শিক নেতাদেরই মূল্যায়ন পাবেন। পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শন তৃণমূলে পৌঁছে দিতে কাজ করবো।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, সম্মেলনে তৃণমূলের মতামতের জয় হয়েছে। তৃণমূলের খোঁজ খবর নিয়ে নেত্রী আমাকে সভাপতি করেছেন। আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে আরো সংগঠিত করে নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। যোগ্য ও ত্যাগী নেতৃত্ব বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই আমরা। সুনামগঞ্জ জেলাকে শেখ হাসিনার নৌকার ঘাঁটিতে রূপান্তর করতে চাই।
সম্মেলনের উদ্বোধক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে জনগণের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই কমিটিকে কাজ করতে হবে। জামায়াত-বিএনপির হামলা মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। এতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের সমর্থন বাড়বে।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের এমপি তাদের নাম ঘোষণার পর নতুন দুই নেতার উদ্দেশ্যে বলেন, পকেট কমিটি করা যাবে না। বসন্তের কোকিল এনে দলে যায়গা দেওয়া যাবে না। দুঃসময়ের ত্যাগী, বঞ্চিত ও আদর্শিক নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com