1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আওয়ামী লীগের সম্মেলন : নেতৃত্বে পরিবর্তন চায় তৃণমূল

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার ::
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলন নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যাচ্ছেনা। তবে তৃণমূল চাচ্ছে নেতৃত্বে পরিবর্তন। এদিকে শীর্ষ পদ পেতে বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে তদবির করছেন বলে নানা সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় অনেক নেতাকর্মীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, বর্তমান কমিটি বিগত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে কাক্সিক্ষত ফলাফল এনে দিতে না পারায় তৃণমূলে ক্ষোভ আছে। আবার অতীতে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও দলীয় সভাপতির আদেশ না মেনে যারা কাজ করেছে তাদেরকেও দলের নেতৃত্ব না দেওয়ার পক্ষে তৃণমূল। নেতৃত্বে কে আসছেন কেউ স্পষ্ট বলতে না পারলেও নানা সূত্রে জানা গেছে শেখ হাসিনা যার হাতে নেতৃত্ব অর্পণ করবেন তার নেতৃত্বই মেনে নিবে তৃণমূল।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বারবার সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করায় সম্মেলন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন সবাই। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের কঠোরতার কারণে সর্বশেষ ঘোষিত ১১ ফেব্রুয়ারিই সম্মেলন হচ্ছে। তাই শেষ দিকে নড়েচড়ে বসেছেন দায়িত্বশীলরা। দ্রুত নামকাওয়াস্তে একটি বর্ধিতসভা করেছেন। এই বর্ধিতসভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দও নেতৃত্বের পরিবর্তন চেয়েছেন।
জানা গেছে, বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান বয়সের ভারে ন্যুব্জ একজন বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। বয়সকালীন নানা জটিলতায় নিয়মিত এলাকায় অবস্থান করতে পারেননা। দীর্ঘদিন তিনি প্রবাসে চিকিৎসা নিয়ে গত জেলা পরিষদের নির্বাচনের আগে দেশে ফিরেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনও পেশাগত কারণে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে তিনি প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগে এলাকায় কাজ করার চেষ্টা করেন। তারা গত ৭ বছরে ১২টি উপজেলার মধ্যে গত বছরের নভেম্বর মাসে মাত্র ৩টি উপজেলায় সম্মেলন করতে পেরেছিলেন। বিশ্বম্ভরপুরে একটি সম্মেলন করেছিলেন ৩ বছর আগে। এর আগে মধ্যনগরে সম্মেলন করলেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি। এভাবে উপজেলায়ও আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্ব-কোন্দলে আছে। এসব কারণে তৃণমূলে চরম ক্ষোভ আছে।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ গত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে না পারা, মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করা হয়নি। যার ফলে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এ কারণে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুরে একজনও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। বিশ্বম্ভরপুরে মাত্র ১জন, শান্তিগঞ্জে ২জন, জগন্নাথপুরে ৩জন, দিরাইয়ে ৩জন, ছাতকে ৬জন, দোয়ারাবাজারে ৩জন, শাল্লায় ১জন, জামালগঞ্জে ২জন, ধর্মপাশায় ৩জন এবং মধ্যনগরে মাত্র ৩জন দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ওয়ান ইলেভেনসহ দলের দুঃসময়ে রাজপথের বিরোধীদের মোকাবেলায় যাঁরা শক্তিশালী ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তাঁদেরকে দীর্ঘদিন দলের শীর্ষ পদের বাইরে রাখায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শীর্ষ পদে ত্যাগী ও সাহসী নেতৃত্বের বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ স¤পাদক হয়েছিলেন ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। পরে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়েছিল। প্রায় আট বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দলের নির্ভরযোগ্য অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির দুই নেতাই থাকতে পারেন। অন্যান্য এলাকা এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতেও নির্বাচনকে সামনে রেখে তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে রাজনৈতিক নানা মেরুকরণের কথা চিন্তা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরো কিছু নাম প্রচার হচ্ছে। সভাপতি পদে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পাবলিক প্রসিকিউটর ড. খায়রুল কবীর রোমেন, হায়দার চৌধুরী লিটনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে খায়রুল হুদা চপল, নোমান বখত পলিন, করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল, আখতারুজ্জামান আহমাদ সেলিম প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নিবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটন বলেন, আমার পিতা জাতির জনকের একজন বিশ্বস্ত কর্মী ছিলেন। আমৃত্যু আওয়ামী লীগ করেছেন। আমিও ’৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক ঘোর সংকটকালে সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। তৃণমূল আমাকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, আমি গত সাতটা বছর দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করেছি। তৃণমূল নেতাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তাদের সুখে দুখে থেকেছি। সম্মেলন সফলভাবে শেষ হলেই আমরা খুশি। তবে নেত্রী যা সিদ্ধান্ত দিবেন তাই আমরা মেনে নেব।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক বলেন, দলকে সংগঠিত করতে ও দলের মৌলিক আদর্শ ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের মূলনীতির প্রতি বিশ্বস্ত নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। এর বিকল্প নেই। যারা অতীতে দলের বিরোধিতা করেছে তাদেরকে নেতৃত্বে রাখা উচিত হবে না। ত্যাগী, নিবেদিত ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল বলেন, দলের সুসময়ে কেবল নয় ক্রান্তিকালেও আমরা সক্রিয় ছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আমার ভাই নূরুল হুদা মুকুট সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে রেখেছেন। দলের জেলা কমিটির তাদেরকে রাখলে দল শক্তিশালী থাকবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জেলার সব কয়টি আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে শক্তিশালী কর্মীবাহিনী কাজ করবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন বলেন, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগকে তৃণমূলে সুসংগঠিত করতে আমাদের পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। আমার মরহুম পিতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষাসৈনিক হোসেন বখত ভাষা আন্দোলনের জন্য কারাবরণ করেছেন। তিনি সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছিলেন। আমার অগ্রজ সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রয়াত চেয়ারম্যান মনোয়ার বখত নেকসহ তিন সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার টানা দুইবারের মেয়র আমার অগ্রজ প্রয়াত আয়ূব বখত জগলুল দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে অনেক ত্যাগ ও শ্রম দিয়েছেন। আরেক অগ্রজ টানা দুই মেয়াদে বর্তমান পৌর মেয়র নাদের বখত করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে ছিলেন। আমি নিজেও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সকল দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থেকেছি। এছাড়াও দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি।আমি আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা আসছে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমাদের কর্মের মূল্যায়ন করবেন এবং নেত্রী যে সিদ্ধান্তই দেবেন সেটাই মেনে নেবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। আমরা সম্মেলনের আয়োজন করেছি। সকল নেতাকর্মীদের সম্মেলন সফলে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমেদ হোসেন বলেন, কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলর হচ্ছে স¤পূর্ণ ক্ষমতার মালিক। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কারা দলের দায়িত্বে থাকবেন।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com