স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা আশা করছেন- বিদ্যালয়টির তালা খোলে দিতে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সোমবার দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় তালাবদ্ধ : পাঠের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলানোর ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুস ও তাঁর পরিবার স¤পৃক্ত থাকায় সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার আব্দুল মজিদকে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার দায়িত্ব দেন। পরে তিনি এক সপ্তাহ চেষ্টার পর ব্যর্থ হওয়ায় পুনরায় নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তাঁকে।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন তালাবদ্ধ এই বিদ্যালয় খুলে দিতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই কারণে শিশু শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের দাবি বিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিশুদের শিক্ষা চালু করাসহ সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। বিদ্যালয় তালাবদ্ধ হওয়ায় গত ১৮ ডিসেম্বর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের একাধিক ব্যক্তি। থানা ও আদালতে উভয়পক্ষের মামলা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১০ সালে এফআইভিডিবি খাদিমনগর সিলেটের নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কান্দিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল কদ্দুছ তাঁর রেকর্ডীয় জায়গা থেকে ১০ শতক জায়গা দান করেন। ভবন নির্মাণ শেষে ২০১১ সালে বিদ্যালয় চালু করে এফআইভিডিবি। নেদারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে বিদ্যালয়টি চালু ছিল দীর্ঘদিন। ২০১৪ সালে বিদেশি ফান্ড বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে হুমকির মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তখন বিদ্যালয় চালু রাখার উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা। শিক্ষকের ভাতা এবং অন্যান্য খরচ স্থানীয়রা বহন করে বিদ্যালয়টি চালু রাখেন। তবে, চলতি বছরের মার্চ মাসে জমিদাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ বিদ্যালয় ভবন দখল করতে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অসহায় হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ২ এপ্রিল। গত ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন জমিদাতা মো. আব্দুল কদ্দুছ। পরে জমিদাতা ও স্থানীয়দের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে কবে তালা খুলবে এই অপেক্ষায় থাকে। বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। শিক্ষার অগ্রগতিতে এই বিদ্যালয় চালু রাখা জরুরি প্রয়োজন বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী এমরান হোসেন ও সাইমা আক্তার বলেন, অন্যান্য বিদ্যালয়ের সবাই পড়তে যায়। কিন্তু আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে ফিরে যাই। তালাবদ্ধ থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শফিক মিয়া ও সানজিদা আক্তার বলেন, কয়েক মাস হয়েছে আমাদের বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেখে লজ্জা দেয়। আমরা বিদ্যালয়টি খুলে দেয়া দাবি জানাই।
অভিভাবক আইনাল হক, সুরাফ মিয়া, সজিব মিয়া, মুক্তা আক্তার বলেন, আমাদের শিশুদের লেখাপড়া করানোর অধিকার হারাচ্ছি। আরও কয়েকদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিশুরা ঝরে পড়বে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মমিন মিয়া বলেন, প্রশাসনের উচিত শিশুদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অন্যায়ভাবে কেউ প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ রাখায় শিক্ষার অগ্রগতিতে বাধা পড়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। এটার বিহিত করা দরকার।
রঙ্গারচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই বলেন, প্রশাসন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এটা আমার ইউনিয়নের কলঙ্ক।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন বলেন, কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য গিয়েছিলাম। যারা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে, তারাই আবার ঝামেলা করার জন্য বিদ্যালয়ের আশপাশে তৈরি হয়ে আছে। পরে আর আগাইনি। দেখা যাক কী করা যায়।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, কান্দিগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যা নিরসনে চেষ্টা চলছে। সমাধানের জন্য আমরা লোক লাগিয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা কয়েক জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে সমাধান করা যায় চেষ্টায় আছি।