1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ড্রেজারের বালুতে হচ্ছে ফসলরক্ষা বাঁধ!

  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া ::
একে তো পিআইসি গঠনে দেরি, অন্যদিকে একমাত্র বোরো ফসলরক্ষায় হাওরের বাঁধ নির্মাণে কোনো নিয়মনীতিই মানা হচ্ছে না তাহিরপুর উপজেলায়। বাঁধের পাশ থেকেই মাটি তুলে শুধু মাটি ফেলেই শেষ, দুরমুজ করা হচ্ছে না। নেই বাঁধে সাইনবোর্ড, নেই মন্তব্য লেখার রেজিস্ট্রারও। এছাড়াও বাঁধে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিআইসিরা নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এছাড়াও পিআইসি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের কারণেই এমন বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রকল্প সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। শুরু হওয়া প্রকল্পে যেমন খুশি তেমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি। পিআইসি নিয়ে মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে মাটিকাটা মেশিন মালিকদের। তারা মাটি কেটে বাঁধে দেবে এজন্য চুক্তিও হয়েছে পিআইসিদের সাথে। সে অনুযায়ী কাজ ও করছে মাটিকাটার মেশিন মালিকরা। এদিকে ১১২টি প্রকল্পের মধ্যে লাগানো হয়নি কোন সাইনবোর্ড ও রেজিস্ট্রার দেওয়া হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন গাজীপুর গ্রাম এলাকার বলদা ও মাটিয়ান হাওররক্ষা বাঁধ অংশের ৭৫নং প্রকল্পে বালু মাটি ফেলে বাঁধের কাজ করছে। এই বাঁধে বালুমিশ্রিত মাটি দেওয়া হলেও কোনো দুরমুজ করতে দেখা যায়নি। দুরমুজ ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে এই বাঁধ। এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২৪ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা।
এমন অবস্থা শুধু এই বাঁধেই নয়। একেই অবস্থা বিরাজ করছে টাকাটুকিয়া ব্রিজ সংলগ্ন মাটিয়ান হাওর পিআইসি নং ৭৬-সহ কয়েকটি বাঁধে। এই বাঁধের কোনো নিয়মের তোয়াক্কাই করছে না। বালু-মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছে। বাঁধে পিআইসি না থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি কারো। এছাড়াও প্রতিটি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ৭৫নং পিআইসির সভাপতি মলাই মিয়া ও সদস্য সচিব জামাল মিয়া জানান, ইউএনও স্যারকে বলেই ড্রেজার দিয়ে আমরা কাজ করছি। নীতিমালা অনুসারে কাজ হচ্ছে না, এমন অভিযোগে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
উপজেলার মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক ফারুক মিয়া জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণকাজ করার কারণে সামান্য পানির চাপে বাঁধে ভেঙে যাবে সহজেই। আর চালু হওয়া বেশিরভাগ পিআইসি নিয়ম মোতাবেক দুরমুজ না করায় বাঁধের শক্তি বাড়বে না এবং বাঁধ মজবুত থাকবে না। বাঁধের ভিতরে ফাঁকা থেকে যাবে। পানি আসলে সেই ফাঁকা অংশ দিয়ে চুইয়ে বাঁধ ভেঙে যাবে। শুধু দুরমুজই নয়, নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বাঁধে।
মাটিয়ান ও শনি হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) ডিজাইন অনুসরণ করা হচ্ছে না। প্রাক্কলন অনুযায়ী ৬ ফুট উচ্চতায় মাটি দেওয়ার পর দুরমুজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৩-৪ ফুট মাটি ফেলার পরেও তা করা হচ্ছে না। বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে বাঁধেই যত্রতত্র মাটি ফেলে রাখছে দায়সারাভাবে। এতে বাঁধ উপরের দিকে ফিটফাট থাকলেও নিচে দুর্বল থেকে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বোয়ালমারা, সমসা, নজরখালি, মহালিয়া, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, লোভার হাওর, বলদার হাওর, টাংগুয়ার হাওরসহ ছোট বড় ২৩টি হাওরে গত বছরে (২০২১ সাল) ৬৮টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এতে ৫৩ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ ও মেরামতে প্রকল্পে প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তবে এবছর অনেক পিআইসি বাতিল করা হলেও এবার গত বছরের চেয়ে ৪৫টি পিআইসি বেশি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার ১১৩টি পিআইসি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার ৮৪.৫০০ শত কিলোমিটার বাঁধ হবে আর বরাদ্দ ২০ কোটি ৯৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। এর মূল্য ২শ ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।
হাওর বাঁচা আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক তোজাম্মিল হক নাসরুম বলেন, তালিকা প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও তথ্য প্রাপ্তির জন্য ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। আমরা চাই টেকসই বাঁধ। বাঁধ করতে হলে চাকা মাটি না দিয়ে গুড়া মাটি দিতে হবে। গুড়া মাটি দিলে বাঁধ শক্ত হয়। চাকা মাটি দিয়ে ভাল করে দুরমুজ না দিলে নিচের দিকে ঠস (ফাঁক) থেকে যায়। আর এই ঠস দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধে ভেঙে যায়। এবার হাওরের কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে।
শনি হাওর পাড়ের কৃষক শফিক মিয়া জানান, বাঁধের কাজের বাজে অবস্থা। বাঁধ প্রাক্কলন বলতে কোন কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না। যেভাবে মন চাইছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে, কোনো তদারকি নেই। একটি প্রকল্পেও ঠিকমতো দুরমুজ দেয়া হচ্ছে না। লাগানো হয়নি সাইনবোর্ড।
তাহিরপুর উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী শওকতুজ্জামান জানান, এই বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।
তাহিরপুর উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, যে সকল পিআইসি নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকেও এই কাজ কঠোর নজরদারির মধ্যে দিয়ে করার জন্য বলেছি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com