মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি চিকিৎসা। দেশর সর্বত্র এই অধিকারটিকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। একটু গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে সহজেই বোধোদয় হয় যে, পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটির সেবামূলক চরিত্রকে বদলে দেওয়া হয়েছে রোগীর সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়ায়। বর্তমান সমাজ সংস্থিতির পরিসরে রোগ নিরাময় আর চিকিৎসাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য নয়, প্রকৃতপ্রস্তাবে মূল লক্ষ্য হয়ে পড়েছে চিকিৎসার নামে বিশাল অঙ্কের টাকা উপার্জন। চিকিৎসা আর সেবামূলক কোনও ব্যবস্থা নয়, চিকিৎসা একটি বাণিজ্যিক ব্যবস্থা মাত্র। তার প্রমাণ হলো, গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) পত্রিকার (দৈনিক সুনামকণ্ঠ) একটি শিরোনাম ছিল ‘ড্রাগ লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চলছে অনেক ফার্মেসি’। চিকিৎসা ব্যবস্থার বর্বর পশ্চাৎপদতা ও প্রতারণামূলক দুর্নীতি নিয়ে গত শনিবার (৪ জানুয়ারি ২০২৩) আর একটি দৈনিকে (সুনামগঞ্জের খবর) শিরোনাম করা হয়েছে, ‘দিরাইয়ে প্রতারণামূলক পোস্টারে চেয়ে গেছে শহর’। শিরোনামটিতে চিকিৎসার নামে রোগীর অর্থ-আত্মসাতের দুর্নীতি চলছে সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত না থাকলেও সংবাদ বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘এদিকে পৌরসভার অনাচে-কানাচে এরকম আরও অনেক কবিরাজ, বৈদ্য, তান্ত্রিকের পোস্টার সাঁটানো অবস্থায় দেখা যায়। পৌরসভার মজলিশপুরে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে সেখানে লেখা হয়েছে- বিসমিল্লাহ চিকিৎসালয়। তদবির পরিচালনায় মো: আমিরুল ইসলাম। মো: ০১৭২১৯২৯০৫৭। এখানে পাগল রোগী, জ্বীন-পরীর আছরগ্রস্থ রোগীসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়।’
এমতাবস্থায় অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে এইসব অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণামূলক প্রয়াস চলতে থাকলে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর অর্জিত ফলপ্রসূ উন্নয়ন চূড়ান্ত বিবেচনায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
মানুষের চাই সুখ, শান্তি, শারীরিক সুস্থতা ও মেধার পূর্ণ বিকাশ এবং উন্নয়ন সেটাকেই নিশ্চিত করবে। মানুষের চিকিৎসা ভালোমতো না হলে ‘সুখ, শান্তি, শারীরিক সুস্থতা ও মেধার পূর্ণ বিকাশ’ সমন্বিত প্রকৃত উন্নয়ন কীছুতেই সম্ভব নয়। ভুলে গেলে চলবে না, জাতিকে শারীরিকেভাবে অসুস্থ রেখে উন্নয়ন কোনওভাবেই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে না, বরং সেটা হবে একটি পঙ্গু উন্নয়ন।